বনদস্যুদের চাঁদাবাজি, জেলে-বাওয়ালিরা দিশেহারা
শেখ সোহরাব হোসেন, শ্যামনগর : পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। আর এ বনের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে জীবন-যাপন করে হাজার হাজার বনজীবী পরিবার। কিন্তু বর্তমানে এ পরিবারগুলো খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে।
বনদস্যুদের চাঁদাবাজির কারণে জেলে-বাওয়ালিরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারছে না। সুন্দরবনে পা ফেললেই বনদস্যুরা জেলে-বাওয়ালীদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে। যার ফলে তারা সুন্দরবন হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে শহর অঞ্চলে রিক্সা, ভ্যান, ভাটায়, মাটিকাটাসহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু তাদের ঐ উপার্জনের টাকা দিয়ে ঠিকমত তাদের সংসার চলে না।
বনদস্যুরা জেলেদের জিম্মি করে শুধু টাকা হাতিয়ে নিয়ে ক্ষ্যান্ত হয় না, তাদের ওপর নির্মম অত্যাচারও করে। পশ্চিম সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে দক্ষিণ অঞ্চলের শ্যামনগর উপজেলার কয়রা, মুন্সিগঞ্জ, হরিননগর, বুড়িগোলিনী, মীরগাং, কালিঞ্চী, টেংরাখালী, কৈখালীসহ অনেক গ্রাম গড়ে উঠেছে। আর এই সুযোগে অত্র অঞ্চলের কিছু সংখ্যক অর্থলোভী, স্বার্থন্বেষী ব্যক্তিও জনপ্রতিনিধি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বনদস্যুদের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে নিজেরা সরাসরি বা বনদস্যুদের সহযোগী হিসাবে কাজ করছে।
সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সিংহড়তলী গ্রামে লাটিম বনদস্যুদের সহযোগী শ্যামনগর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। বর্তমানে পশ্চিম সুন্দরবনে জাহাঙ্গীর বাহিনী, জোনাব বাহিনী, আলিম বাহিনী, খোকা বাবু বাহিনী, নো মিয়া বাহিনী, চেংগীস বাহিনীসহ অসংখ্য নামীয় বনদস্যু রয়েছে। বনদস্যুরা জেলেদের জিম্মি করে মুক্তিপণের টাকা আদায়ের জন্য তাদের সহযোগীদের সাহায্যে গ্রহণ করে।
সহযোগীরা বিকাশের মাধ্যমে তাদের মুক্তিপণের টাকা পাঠিয়ে দেয়। শুধু তাই নয় এ সমস্ত সহযোগিরা ২ টাকা এবং ৫ টাকার নোটে নম্বারের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়ে জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করার কার্ড করে দেয়।
অসহায় নিরুপায় জেলেরা বনে প্রবেশ করে আর এক বনদস্যুর হাতে জিম্মি হয়ে যায়। জেলেদের সাথে আলাপ কালে তারা বলেন, আমরা বনে মাছ ধরে, কাঁকড়া শিকারে যা আয় করি তার চেয়ে অধিক টাকা বনদস্যুদের মুক্তিপণের জন্য দিতে হয়।
তারা আরও বলে, আমাদের অঞ্চলে পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি, বন বিভাগ নিয়মিতভাবে সুন্দরবনে টহল দেওয়ার পরও আমাদেরকে সুন্দবনের বনদস্যুদের মুক্তিপণ দিয়ে যেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য শ্যামনগর থানা ওসি ব্যবহৃত সেল ফোনে কল দেওয়ার পরও ফোনটি রিসিভ হয়নি।
এ বিযয় মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নে বিট অফিসার এস,আই শহিদুল ইসলাম কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোন নিরীহ মানুষ ধরছি না যাদের ধরছি তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। এখন জঙ্গি অভিযান চলছে অভিযান শেষ হলে ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সাংবাদিক, গণ্যমান্য ব্যক্তি জনসাধারণদের নিয়ে সুন্দরবনে বনদস্যুসহ তাদের সহযোগীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে কিভাবে ধরা যায় সে বিষয় উপর একটি মতবিনিময় সভা করব।