ওজন সনদবিহীন কনটেইনারে পণ্য রপ্তানি হবে না
হাসান আরিফ : আগামী ১ জুলাই থেকে রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ওজন করে সনদ নিতে হবে। ওজন যাচাইয়ের সনদ না থাকলে রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার জাহাজে তুলবে না জাহাজ পরিচালনাকারীরা। তবে এখনো প্রস্তুতি শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। তাই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য নতুন করে হোঁচট খেতে পারে বলে ধারণা করছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা এ বিষয়ে পুরোপুরি অবগত নন।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মইনুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ওজনের বিষয়টি জানা থাকলেও তা বিস্তারিত জানি না।’
আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা বা আইএমওর সমুদ্রে জীবনের নিরাপত্তা–বিষয়ক কনভেনশনের আওতায় এই বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। গত ২৩ মে সংস্থাটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেয়। বাংলাদেশ ১৯৮১ সালে এই কনভেনশন অনুসমর্থন করে।
জানা গেছে, বর্তমানে কোনো পণ্য রপ্তানির সময় বিভিন্ন নথিতে (‘প্যাকিং লিস্ট’ ও ইনভয়েস) পণ্যের বর্ণনার সঙ্গে ওজনের তথ্য দেন রপ্তানিকারকেরা। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পরে তথ্য যাচাই-বাছাই করে রপ্তানির অনুমোদন দেয়। আর কোনো ক্ষেত্রে সন্দেহ হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওজন যাচাই করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ কম থাকায় ওজনের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। আর এতে করে বিভিন্ন সময় পণ্য পরিবহনকারী জাহাজের দুর্ঘটনাও ঘটছে। ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের উপকূলে কনটেইনার জাহাজ ‘এমএসসি নেপলি’ দুর্ঘটনার পর তদন্তে বেরিয়ে আসে, ঘোষণার চেয়ে ওই জাহাজে বেশি ওজন ছিল। এরপরই মূলত জাহাজ ও নাবিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নতুন বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সংযোজন করে আইএমও। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, রপ্তানির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয়, এমন তৃতীয় কোনো স্বীকৃত পক্ষ পণ্যের ওজন নিশ্চিত করে ওজন যাচাই সনদ দেবে। জানতে চাইলে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর জাকিউর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আগামী সোমবার চট্টগ্রামে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। এখন পর্যন্ত বেসরকারি ডিপোগুলো ওজন করে সনদ দেবে। ইপিজেডগুলো নিজেরা করতে না পারলে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে ওজন করে সনদ নেবে। শুরুর দিকে হয়তো কনটেইনার জট হতে পারে। সমস্যাও হতে পারে। তবে ধীরে ধীরে তা মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ১৬টি কনটেইনার ডিপোতে ৯০ শতাংশ রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে বোঝাই হয়। দেশের নানা অঞ্চলে থাকা কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে এনে এসব ডিপোতে নিয়ে কনটেইনারে পণ্য বোঝাই করা হয়। এর বাইরে ঢাকার কমলাপুর ডিপো ও রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চলগুলোতেও (ইপিজেড) কিছু পণ্য বোঝাই করা হয়। কনটেইনার ডিপোগুলোতে ওজন মাপার ব্যবস্থা থাকলেও ইপিজেডগুলোতে তা নেই।
যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, ডিপো দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ওজন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না। কিন্তু রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো থেকে ডিপোতে এনে ওজন করে সনদ দেওয়ার বিষয়টি জটিলতা তৈরি করতে পারে।
রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে বিদেশি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন ফ্রেইট ফরোয়ার্ড প্রতিষ্ঠানগুলো।
এদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালে আইএমও এই বাধ্যবাধকতা জারি করেছে। হাতে দুই সপ্তাহ সময় থাকলেও আমাদের এখানে এখনো কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। তাই আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন বিধানের কারণে রপ্তানি খাতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।