বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে দুই হাজার কোটি টাকা মেগা প্রকল্প
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : বর্জ্যরে ভাগাড় বুড়িগঙ্গা নদী প্রাণহানিকর এক নদী হয়ে উঠছে দিন দিন। এক সময়ের ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গার এই অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা। দাবি উঠে, ‘ঢাকা বাঁচাতে হলে বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। ’
এসব দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত রাখতে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারকি করবে। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০ বছর।
এ সম্পর্কে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, নদীর মূল অবস্থান অটুট রেখে সিঙ্গাপুরের কালং ও সিঙ্গাপুর নদী এবং বাংলাদেশের হাতিরঝিলের আদলে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ভাবা হচ্ছে। ‘ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ইন সাউথ সিটি করপোরেশন’ নামের প্রকল্পের আওতায় অস্তিত্ব হারাতে বসা বুড়িগঙ্গা নদী বাঁচানোর স্বপ্ন দেখছে নগরবাসী।
মেয়র জানান, রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের অন্যতম কারণ বর্জ্য। আবাসিক এলাকার বর্জ্য ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের স্যুয়ারেজ লাইন হয়ে মিশছে এ নদীর পানিতে। নতুন এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য স্যুয়ারেজ লাইনে গড়িয়ে আসা পানি নদীতে পড়ার আগে পরিশোধন করা। পাশাপাশি মৃতপ্রায় এ নদীর নাব্য ও চারপাশ নান্দনিক করে তোলা।
ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, নদীর ভূ-প্রাকৃতিক অবয়ব অক্ষুণœ রাখতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নদী দু’পাড় ঘেঁষে রাখা হচ্ছে বিশেষ ধরনের সিরামিকের তৈরি ওয়াকওয়েসহ (চলাচলের রাস্তা) নানা বিনোদন সুবিধা।
জানা গেছে, সাঈদ খোকনের নেতৃত্বে নদী সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএসসিসি ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত মতে, আগামী নভেম্বরের শেষের দিকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। প্রকল্প নকশার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেঙ্গল ইনস্টিটিউটকে।
রাজধানীর ১৮টি স্যুয়ারেজ পাইপলাইনে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নদীতে গড়িয়ে পড়ছে দূষিত পানি। স্বাভাবিক উপায়ে স্যুয়ারেজ পাইপের পানি ফিল্টারিং করতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৭ থেকে ৮টি পরিশোধন প্লান্ট বসানো হবে এবং পর্যায়ক্রমে সব স্যুয়ারেজ পয়েন্টে পরিশোধন প্ল্যান্ট বসাবে কর্তৃপক্ষ।
নদীর পানির মান ঠিক রাখতে সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও জাপানের অনুকরণে রাজধানীর স্যুয়ারেজ লাইনের পানি রিসাইক্লিন করা হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে স্যুয়ারেজ লাইনের দূষিত পানি বুড়িগঙ্গায় পড়ার আগে তা আলাদা তিন থেকে চারটি পুকুরে রাখা হবে। প্রথম পুকুরে দূষিত পানি ফিল্টারিং হয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুকুর হয়ে নদীতে যাবে। পরিবেশ ক্ষতির বিষয়টিও পর্যবেক্ষণে রাখবে ডিএসসিসি। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি