প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে টিআইবি রাজস্ব বৃদ্ধির বোঝা পড়বে স্বল্প আয় ও ক্ষুদ্র সঞ্চয়ীর ওপর
জাফর আহমদ : প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির বড় অংশ যেভাবে সীমিত আয়ের মানুষ, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও সর্বোপরি সাধারণ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে তা অনুমোদিত হলে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য বাড়বে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক বিবৃতিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও এ সম্পর্কিত সুদ পরিশোধ করবে। এই বাড়তি ব্যয় মেটাতে চাকরিজীবীসহ যারা সৎভাবে নিয়মিত কর প্রদান করে থাকেন ও পরোক্ষ কর তথা মূসক কর দিয়ে থাকেন তাদের ঘাড়েই বৈষম্যমূলক ও অসহনীয় হারে চাপিয়ে দেয়ার প্রস্তাব হয়েছে।
স্বল্প আয়ের মানুষের অন্যতম নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের উপায় সঞ্চয়পত্রের ওপর অতিরিক্ত করারোপ করে বৈধ পথে বাড়তি আয়ের পথ রুদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু তার বিপরীতে বিত্তশালী ও ধনীদের বিভিন্ন প্রকার সুযোগ-সুবিধা ও রেয়াত দেওয়া হয়েছে। এ প্রস্তাবনাকে সরকারের অবিবেচনা প্রসূত ও অপরিনামদর্শী প্রস্তাব বলে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুয়েটি ও শ্রমিক মুনাফা তহবিলের ওপর আরোপিত কর সীমিত আয় ও এ ধরনের তহবিলের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন দুর্বিষহ করবে। রাজস্ব আয়ের সিংহভাগের উৎস হওয়া উচিত আয়কর। কিন্তু রাজস্ব কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশিত পর্যায়ে আয়কর বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়ে ক্রমাগতভাবে মূসকের দিকে ঝুকে পড়ছে। মূসকের উপর সম্পূরক শুল্কসহ যেভাবে মূসক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে তার সিংহভাগ ভোক্তাই মধ্যবিত্ত, নিম্ন আয়ের বা সাধারণ জনগণ। তাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার জন্য পণ্য ও সেবা পেতে নতুন বাজেট অনুযায়ী কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ মূল্য বেশি দিতে হবে। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি যুক্ত হয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হবে। এতে অস্থিতিশীলতা ও ক্ষোভ বাড়বে।
প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকাকে বৈধতা প্রদানে অসাংবিধানিক ও অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে এর প্রতিবাদ করেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ সুযোগ বন্ধ করাসহ বাজেটে উল্লেখিত প্রস্তাবনাসমূহ পুনর্বিবেচনা করে সরকার জনগণের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট হবে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ওপর ঢালাওভাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বোঝা চাপানোর আগে রাজস্ব আয় বাস্তবেই স্বচ্ছতার সঙ্গে জনকল্যাণে ব্যবহৃত হয়, এমন জনআস্থা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি