এরশাদের ভারত সফর নিয়ে নানা কৌতূহল
এম কবির : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৪ দিনের সফরে গতকাল রোববার ভারত গেছেন। প্রতিবার তার ভারত সফরের সময় রাজনৈতিক মহলে নানা কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। এবারও ভারত সফর নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। কারণ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বন্দুকযুদ্ধ ও টার্গেট কিলিং চলছে এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশ্ন উঠছে কি উদ্দেশে এ সময় তার ভারত সফর?
রোববার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে বিমানযোগে তিনি দিল্লির উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। আগামী ২২ জুন তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। ভারত সফরে এরশাদের সফরসঙ্গী হয়েছেন তার একান্ত সচিব মেজর (অব.) খালেদ আখতার। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় জানান, চার দিনের ব্যক্তিগত সফরে তিনি ভারত গেছেন।
২০১২ সালের ১৪ আগস্ট ভারত যান এরশাদ। ভারত থেকে ফিরে এরশাদ জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিতে ভারতের সমর্থন পাওয়া গেছে। তবে এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণে ভারতের সমর্থন-অসমর্থনের বিষয়টি একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন অনেকে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর, এরশাদের ‘ক্ষোভ’ প্রশমন করে তাকে মহাজোটে রাখতেই সে দেশে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধে দেশ যখন একটি রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখে ঠিক তখনই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তিনদিনের জন্য ভারত সফরে যান। তার এই সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন ছিল।
ওই সময় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে যোগ দিতে ব্যক্তিগত সফরে এরশাদ ভারতের রাজস্থান যান এবং শুক্রবার বিকালে দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু তখন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সাম্প্রতিক ভারত সফর ও দেশটির পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বরখাস্ত হওয়ার পর এরশাদের এই সফরকে সাধারণ মানুষ ‘একান্তই ব্যক্তিগত সফর’ বলে মানতে নারাজ ছিল।
অবশ্যই জাপার একটি সূত্র তখন জানিয়েছিল, ভারত সফরের অন্তরালে এরশাদ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি নরেন্দ্র মোদি সরকারের মনোভাব জানার চেষ্টা করছেন। ভারত সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে দূতিয়ালি করতেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল।
২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ছিটমহল বিনিময়কে বাস্তবে রূপায়ন করার জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন। দিনহাতাতে নিজের পূর্বপুরুষের বাড়ি সফর করতে এরশাদ ভারতে যান। ভারতীয় পার্লামেন্ট যেভাবে ছিটমহল বিনিময় প্রস্তাব পাস করেছে সেটা প্রশংসনীয় উল্লেখ করে তিনি তখন বলেন, এটা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে। এমন উদ্যোগ সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কারণে।
২০১৪ সালের ৬ জুন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের ভারত সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যেতে পারেননি। বুকে ব্যথার কথা জানিয়ে তিনি সিএমএইচ-এ ডাক্তারের কাছে যান। এরশাদ তখন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে ভারত সফরে যেতে চেয়েছিলেন। অবশ্য সব প্রস্তুতি নিয়েও শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করা নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে নানা গুঞ্জন শুরু হয়।
তখন অবশ্য এরশাদের সাবেক সহধর্মিনী বিদিশা ভারতে যাওয়ায় এবং এরশাদ তার সঙ্গে দেখা করবেন এমন সংবাদে ক্ষুব্ধ হন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এরশাদকে রওশন এরশাদ কড়া ভাষায় এ নিয়ে কথাও বলেন। আর এ জন্যই হঠাৎ করে ওই সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন এরশাদ। তবে এও শোনা যায়, সরকারের চাপেই ভারত সফর বাতিল করেন এরশাদ। সরকার ওই মুহূর্তে চায়নি বিজেপি সরকারের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে এরশাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠুক। ২০১৪ সালের ৮ আগস্ট জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছয় দিনের ব্যক্তিগত সফরে কলকাতা যান। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ