অভিযান সংক্ষিপ্ত করার নেপথ্যে…
দীপক চৌধুরী : সন্ত্রাসী, অস্ত্রবাজ ও জঙ্গি গ্রেফতারে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান আরও চালানো হতো, কিন্তু দেশের বিভিন্ন কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত বন্দী থাকায় ‘অভিযান’ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ-র্যাব পরিচালিত অভিযানে পেশাদার সন্ত্রাসী ও জঙ্গি ছাড়াও সাধারণ মানুষ ধরা পড়ে। শেষ পর্যন্ত ‘অজ্ঞাত’ কারণে কিছু ‘মানুষ’কে জেলে পাঠানো হলেও তারা জামিনে মুক্তি পান। বিনিময়ে সাধারণ মানুষকে বেশ বড় অংকের অর্থ খরচ করতে হয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে।
জানা গেছে, সারাদেশে ৩৪ হাজার ৩শ বন্দী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কারাগার রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রায় ৭৪ হাজার বন্দী রয়েছে দেশের কারাগারগুলোতে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ধারণ ক্ষমতা ২ হাজার ৬৮৪। কিন্তু সাড়ে সাত হাজার বন্দীকে রাখা হয়েছে এ কারাগারে। সূত্রমতে, একটানা ১৫ দিন এই অভিযান চালানোর কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাঝপথে এ সিদ্ধান্ত বদলানো হয় বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়।
সংসদে রোববারের অধিবেশনে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, জেল কোড অনুযায়ী প্রতিজন বন্দীর শোয়ার জায়গা ৩৬ বর্গফুট হিসাবে কারাগারে ধারণক্ষমতা নির্ধারিত হয়। অধিকাংশ কারাগারে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বা তিনগুণ বন্দী অবস্থান করছে।
দেশের কারাগারগুলোতে প্রয়োজনীয় ধারণ ক্ষমতা না থাকায় সাঁড়াশি অভিযান স্থগিত করতে হয়েছে বলে একটি প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে। এতে কারাগারে কর্মরত অনেকেই অনৈতিক ও আর্থিক অপকর্ম করার অবাধ সুযোগ পান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা এসব বিষয় অবগত হয়েই পরবর্তীকালে আরেকটি অভিযান চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন সরকারকে।
জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ কারাগারের বাইরে খাদ্য গুদাম, জেল সুপারের অফিস, বাসা, জেলারের বাসা, কারা মসজিদ, কারারক্ষী ব্যারাক, সালামি মঞ্চ ও রিজার্ভ গার্ডসহ ক্যান্টিন রয়েছে। ফলে নানারকম অনিয়ম করা সহজ হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় সরকারি দলের নেতাদের হস্তক্ষেপে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা থেকে থামতে হয়।
ব্যাপক ধরপাকড়ের পর এবার প্রচণ্ড তাপদাহে অতিষ্ঠ বন্দীরা ব্যারাকে জায়গা সংকটে ‘গরু-ছাগলে’র খোঁয়াড়ের ন্যায় অভিশপ্ত ও অশান্তিজীবন নিয়ে বসবাস করছে। বিভিন্ন কারাগারের ভেতর স্বাচ্ছন্দ্যতার বালাই নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, জেলা পর্যায়ের কারাগারে শতশত বন্দী গাদাগাদি করে বসবাস করায় প্রায় সময়েই তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আবার ছাড়া পাওয়া বন্দীরা রোগাক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরছে।
সম্প্রতি ঢাকা কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়া এমন কজন বন্দী মন্তব্য করেন, ‘দোজখ থেকে যেন বের হলাম। এতসব বন্দী, তিল ধারণের ঠাঁই নেই কারাগারে। এমন মানবেতর জীবনযাপনের চেয়ে মৃত্যু অনেক শ্রেয়।’ সম্পাদনা : লিয়াকত আমিনী