সুপ্রিম কোর্টে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় বাজেট অধিবেশন দেখতে যেতে পারেননি প্রধান বিচারপতি
মাহমুদুল আলম : গত ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। ওইদিন বাজেট অধিবেশন দেখতে সংসদে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। একইদিন প্রধান বিচারপতিকেও অধিবেশন দেখতে যেতে আমন্ত্রণ করেছিল সংসদ কর্তৃপক্ষ।
সেজন্য প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন সংসদ ভবনের ছয় তলায় অবস্থিত ‘প্রধান বিচারপতির বক্স’ সংশ্লিষ্টরা। তবে একইদিনে সুপ্রিম কোর্টে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় বাজেট অধিবেশন দেখতে যেতে পারেননি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব মো. আনিসুর রহমান জানান, বাজেট অধিবেশন দেখতে প্রধান বিচারপতিকে ২ জুন সংসদে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সংসদ কর্তৃপক্ষ। তবে ওইদিন ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা সুপ্রিম কোর্ট পরিদর্শনে যান। তাদের পরিদর্শনের জন্য তারিখটি অনেক আগেই নির্ধারিত ছিল। তিনি জানান, একটি কোর্সের অংশ হিসেবে প্রতিবছরই একবার করে কলেজ থেকে সুপ্রিম কোর্টে বিচার বিভাগের কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন কর্মকর্তারা। এবার পরিদর্শনে আসেন ৮৭ জন। তাদের মধ্যে ৪-৫ জন উচ্চ পদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তা এবং অন্যরা সামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বিদেশিও ছিলেন বলে জানান আনিসুর রহমান।
তিনি বলেন, এই সময় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে তাদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি একটি বক্তব্য রাখেন। তাদের পক্ষ থেকেও একটি বক্তব্য রাখা হয়। তাছাড়া শুরুতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর থেকে দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে একটি বক্তব্য রাখা হয়। আনিসুর রহমান জানান, তারা কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকটি আদালতের বিচার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তবে ওই সময় আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম না থাকায়, আপিল আদালতের এক নম্বর বিচারকক্ষ (প্রধান বিচারপতির এজলাস) খুলে তাদের দেখানো হয়।
সংসদ অধিবেশনে প্রধান বিচারপতির যাওয়া বিষয়ে একান্ত সচিব বলেন, প্রধান বিচারপতি সাধারণত বছরে দুইবার সংসদ অধিবেশন দেখতে যান। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বাজেট অধিবেশন। গতবছরও বাজেট অধিবেশন দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। অধিবেশনে আপিল বিভাগের সব বিচারপতিকেই আমন্ত্রণ জানানো হয় বলে জানান একান্ত সচিব। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য কোনো বিচারপতি অধিবেশন দেখতে যান বলে আমার জানা নাই।
প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে বিচারপতিদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করে সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) (সংশোধন) বিল-২০১৬ উত্থাপন করা হয়। এ সময় ওয়াকআউট করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তাছাড়া বিচারক অপসারণের ক্ষমতা আইনসভার হাতে আনাকে ‘অবৈধ’ বলে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়েও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।
পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৯০ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দিতে বিলটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠিয়ে দেয় আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা সম্পন্ন জাতীয় সংসদ।
এরপর গত ২ জুন পরবর্তী অধিবেশন দেখতে প্রধান বিচারপতি সংসদে না যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানামুখী কথাবার্তার প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে একান্ত সচিব এই প্রতিবেদককে ওইদিন সংক্রান্ত এসব তথ্য জানান।
তবে গত ৫ জুন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাজেট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কোনো ধরনের সমস্যা নেই। যখন যা চাই তাই পাই। তবে নিম্ন আদালতে সমস্যা আছে। এ সময় রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের সুসম্পর্ক আছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।