নিরাপত্তা শঙ্কায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সব সামাজিক অনুষ্ঠান দুমাস বন্ধ
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : একের পর এক হিন্দু পুরোহিত এবং সেবক হত্যার পর হিন্দু ধর্মাবলম্ব^ী সবার মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই পর্যন্ত যে সব ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেও বিশেষ সাফল্য আসেনি। সবশেষ ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুভেশানন্দ মহারাজকে চিঠি দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এই ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়েছে। রামকৃষ্ণ মিশনের ১৪টি শাখা ১০০টি আশ্রমের সবাইকে সাবধানে, সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা ও কাজ করার অনুরোধ করেছেন এর অধ্যক্ষ। পাশাপাশি এখন তল্লাশি করে মন্দিরের ভেতরে মানুষকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন মন্দিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নানা ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে। মন্দিরের পুরোহিতরাও ব্যবস্থা নিয়েছেন কিছু কিছু। এরই অংশ হিসাবে মন্দিরের পুরোহিতরা সতর্ক থাকার পাশাপাশি তারা মন্দিরে আগত ব্যক্তিদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। আগে ঢাকার বাইরের ছোট ছোট মন্দিরগুলোতে ঘটনা ঘটলেও এবার রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষকে হুমকি দেওয়ার কারণে ঢাকার অন্যান্য মন্দিরগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এদিকে নিরাপত্তার কারণে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বন্ধ আছে সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান। পুরোহিত, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা এবং সাধারণ অনুসারীদের কথায়, তারা সেখানে এখনও ধর্ম পালনে কোনো বাধার মুখে না পড়লেও কিংবা কোনো হুমকি না পেলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই তারা সতর্ক রয়েছে। তবে প্রশাসন থেকে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এর কারণে তাদের মধ্যেও আতঙ্ক বাড়ছে। এই কারণে বড় ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান পালন করছে না দুই মাস ধরে।
হিন্দু ছাড়াও বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই অবস্থায় ডয়চে ভ্যালেকে এক সাক্ষাৎকারে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেছেন, সারাদেশে ২৪ হাজারের মত মন্দির আছে। ঢাকাসহ বড় বড় কিছু মন্দিরে পুলিশের নিরাপত্তা আছে। তবে সব মন্দিরে পুলিশ দিয়ে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। এরজন্য প্রয়োজন সামাজিক উদ্যোগ এবং সচেতনতা। এটা সত্য যে পুরোহিত ও সেবক হত্যা, মন্দিরে হামলাসহ নানা ঘটনায় হিন্দুসহ সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে আছেন। কিন্তু পূজা অর্চনায় কোনো বাধা নেই এবং সমস্যাও হচ্ছে না। ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নিয়মিত পূজা-অর্চনা হলেও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ আছে গত দু’মাস ধরে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশ চিঠি দিয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছে। আমরাও তাই বন্ধ রেখেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা টার্গেট কিলিং বন্ধ ও জঙ্গি দমন করার জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছি। প্রয়োজন হলে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে। কিন্তু আমরা মনে করি এই অভিযান সফল। দেশের পরিস্থিতি ভাল। আতঙ্কিত হওয়ার মত কোনো ব্যাপার নেই। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম