৭০০ খাসিয়াকে দেশ ছাড়ার নির্দেশের ব্যাপারে কিছুই জানি না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : সাত দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে বসবাস করা সাত শতাধিক খাসিয়াকে স্থানীয় প্রশাসন বাংলাদেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই ব্যাপারে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশি কোনো নাগরিককে জোর করে দেশ ছেড়ে যেতে বলা হবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। আর ৭০০ খাসিয়াকে দেশ ছাড়ার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন নির্দেশের ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই।
শনিবার উত্তর-পূর্ব ভারতের দৈনিক যুগশঙ্খের এক সংবাদে বলা হয়, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের নাহরপুঞ্জিতে বসবাসরত খাসিয়ারা ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ওইসব খাসি মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মেঘালয়ের রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে খাসিয়াদের সংগঠন খুন হিনিউট্রেপ ন্যাশনাল অ্যাওয়াকেনিং মুভমেন্ট। এই ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৭০০ খাসিয়াকে দেশ ছাড়ার ব্যাপারে ভারতীয় গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সেই ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হবে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই ব্যাপারে ভারতের কোনো মন্ত্রী কিংবা সংস্থা আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কেউ কোনো যোগাযোগ করেনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমাকে স্মারকলিপি পাঠিয়ে সংগঠনের সভাপতি পি সাইবন বলেছেন, দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশে পৈতৃক ভিটেতে বসবাস করা খাসি পরিবারগুলো যাতে সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারে, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মোদির হস্তক্ষেপ দাবি করছি। শিগগিরই ওই জমি না ছাড়লে তাদের বলপ্রয়োগে উচ্ছেদ করা হবে বলেও নির্দেশ বলা হয়েছে। জুনের প্রথম সপ্তাহে এই নির্দেশ দিয়ে ৭ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন প্রশাসন। তাদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন প্রতি মুহূর্তে উচ্ছেদের ভয় করছে ৭০০ খাসি পরিবার। এই ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, প্রশাসনের কোন স্তর থেকে এবং কে কোন ইস্যুতে তাদেরকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে সেটা আমাকে খবর নিয়ে দেখতে হবে। এই ব্যাপারে আমি আসলে কিছুই জানি না। আর স্থানীয় প্রশাসন হিসেবে যাদের কথা বলা হচ্ছে, তারা আসলে কার নির্দেশ দিয়েছেন যদি দিয়ে থাকেন সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।
তিনি বলেন, তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছে এমন কোনো বিষয় আমার জানা নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের ভেতরের সমস্যা হলে সেটাতো বাংলাদেশই সমাধান করবে সেই ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও ওই দেশের কোনো মন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে কেন?
যাদের সমস্যা হয়েছে বলে তারা ভারতের গণমাধ্যমে বলেছে, তারাতো বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কিংবা আমাকে কেউ জানায়নি। তাই এই ব্যাপারে প্রকৃত ঘটনা কী সেটা খতিয়ে দেখারও প্রয়োজন আছে।
বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজার জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়কে চা বাগানে তাদের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। ইতোমধ্যে তারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনেও নেমেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিবিসির এই ধরনের খবরের সত্যতাও আমার ঠিক জানা নেই। কারণ ওই ৭০০ খাসিয়াকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণলায় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
যদিও ওই জেলার প্রশাসন থেকে আমাদের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে, চা-বাগানে সরকারের খাস জমি উদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও খাসিয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতি হবে এমন কিছু করা হবে না। আবার চা বাগান কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, বাগানের জায়গা ছেড়ে দিলে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বাগানের মালিকের পক্ষ থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাদেরকে উচ্ছেদ করার কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তারা বাংলাদেশের নাগরিক। তবে তারা যে জমিতে বসবাস করছেন ওই জমি তাদের মালিকানাধীন নয় সরকারি খাস জমিতেই তারা বছরের বছর বসবাস করে আসছেন। আর জমি নিয়ে মামলাও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুর খাঁন ইউনিয়ন থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্তের কাছে চা-বাগানের মধ্যে দুটি গ্রামে বসবাস করছে ৮০টির মতো খাসিয়া পরিবার। তাদের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামে বাস করলেও তাদেরকে তাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে। এই জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষ হলেও তারা উঠেনি। বলেছে, উচ্ছেদ নোটিসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন তারা। তারা দাবি করেছেন, এই দেশের নাগরিক হয়ে খাস জমি ভোগ না পারলে কোথায় যাবে। ২০০৮ সাল থেকেই সরকারের সাথে এই সমস্যা শুরু। হামলার ঘটনা ঘটনার পর মামলা হয়।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, জায়গাটি নিয়ে আগে থেকেই মামলা রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে। এর আগে কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না। তবে খাসিয়াদের দাবি, বাসের স্থান এবং পান চাষের জমি ছেড়ে যাবে না তারা। এই জন্য উচ্ছেদের নোটিস প্রত্যাহার করার পাশাপাশি তারা বসবাস করার অধিকারও ফিরে পাওয়ার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, সরকারের খাস জমির ব্যাপারে যদি মামলা থেকে থাকে এই ব্যাপারে আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হলে আদালত যে নির্দেশনা দিবে সেই অনুযায়ী কাজ হবে। আদালতের নির্দেশনা না মানার কোনো সুযোগ নেই। আদালতের আদেশের জন্য তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমি এটা বলতে পারি, আমি বা আমরা মন্ত্রণালয় থেকে তাদেরকে উচ্ছেদ করার কিংবা দেশ ছেড়ে দেওয়ার কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেইনি। এই রকম কোনো আলোচনাও হয়নি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। পুরো ঘটনাটি কী তাও জানতে হবে। এরপর পুরোপুরি ঘটনাটি বলতে পারব। এখন এর বেশি কিছু বলতে পারছি না। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম