বিভক্তিবিলাস করিসনে ভাই বিভক্তিবিলাস করিসনে
: চারপাশটায় তাকাচ্ছেন? তাকাচ্ছেন চারপাশটায়?
: তাকাচ্ছি। না তাকিয়ে পারছি না।
: কিছু বুঝতে পাচ্ছেন?
: পাচ্ছি। সবকিছুই বুঝতে পাচ্ছি। আগাগোড়া বুঝতে পাচ্ছি। বুঝতে পাচ্ছি না, সবাই কেন একসঙ্গে ও এক গুরুতে বুঝতে পাচ্ছি না!
: ভয় পাচ্ছেন?
: চোখের কোণে কান্না পাচ্ছি, বুকের ভাটা আগুন পাচ্ছি, মনের কোণে ক্রোধ পাচ্ছি, মগজেমস্তিষ্কে পীড়ন দেখছি, ডাইনে বাঁয়ে হতাশা দেখছি।
: কী করতে হবে, ভাবছেন?
: পায়ে ধরতে হবে।
: কার পায়ে?
: দেশের মানুষের পায়ে।
: কেন ধরতে হবে, কারণ আমরা ভাবনাতেই নিচ্ছি না কী আমাদের করতে হবে। বিষয়টি ভাবনায় নেওয়ার কিংবা মাথার খোপে ঢোকানো কোনো চেষ্টাই করছি না।
: কী করে বুঝলেন যে চেষ্টা করছি না?!
: দু’তিনটে সিমটম আছে। কেউকেউ বুঝতে পাচ্ছি না, আমি এখনও মন্দ না থাকার অর্থ আমার প্রতিবেশীর ভালো থাকা নয়। কেউকেউ বুঝতে পাচ্ছি না, অনেক সমস্যার মধ্যে কোনটির সমাধানে সবার আগে নজর ঢালব। কেউকেউ বুঝতে পাচ্ছি না কোন কথাটি কখন বলব। এক ঋতুর গান আরেক ঋতুতে কেন গাইব? অকালে অসময়ে অপ্রয়োজনে শান্তির গায়ে খোঁচা দেব?! মানুষের নিরাপত্তার জন্য সংহতির প্রয়োজন যখন বিকল্প রহিত, তখন কেন করব বিভক্তিবিলাস?! বহু কষ্টে বহু ত্যাগে ও বহু ছাড়ে নখাগ্র থেকে কেশাগ্র পর্যন্ত কিছু নষ্ট ও ভ্রষ্ট মানুষের মুকাবলায় একাট্টা হওয়া মানুষগুলোকে বাক্যের ভুল বাণ-এ ও সংযমহীনতায় ছত্রখান করে দেব?! কেন আমরা বুঝতে পারব না এতে লাভ কার ক্ষতি কার?! কেন কিছু মানুষ আমরা বুঝতে পারব নাÑ দেশের সব ভূমিপুত্রের পায়ের নিচে সমান চাতাল ও মাথার ওপর সমান ছায়া রাখতে হবে। কেন আমরা বুঝতে পারব নাÑ বিশ্বাস যারযার মাতৃভূমি সবাকারÑ এই কথাটির অর্থ কী? এই কথা কার জন্য!
যারা এই কথাগুলো বুঝতে পাচ্ছে না, কেঁদেকেঁদে আমি বলতে বাড়িবাড়ি যাব তাদের, গিয়ে তাদের ধরব, তাদের পায়ের ওপর চোখ থেকে মোটামোটা জলের গোলা ফেলব আর তাদের ইমারতের পাষাণপৈঠায় কপাল ফাটাতে ফাটাতে বলব যা করিস ভাই, দেশটাকে মারিস না। অকালীন ও অশালীন কথা বলে। বহু কষ্টে পাওয়া চলার পথ পিচ্ছিল করে দিসনারে ভাই দিস না, স্মার্টনেস দেখিয়ে অতগুলো গরম ভাত গরম দুধ দিয়ে একসঙ্গে মাখিস না ভাই একসঙ্গে মাখিস না।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাবেক সিনিয়র সচিব
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন