জনপ্রশ্নে যারা সহনশীল, ঐক্য হবে তাদের সঙ্গেই
একটি রাষ্ট্র নানা সংকট, সম্ভাবনার মধ্যে দিয়েই এগোয়। এখানে অস্থিরতা থাকবে, অস্থিতিশীলতা থাকবে, সম্ভাবনা থাকবে, সমস্যাও থাকবে। এসব প্রত্যেকটিই সঠিক। সত্য। এখন কেউ চাইলেও এসবের কোনোটিকে এড়িয়ে এগোতে পারবে না। একথা বলাই যায়, আমরা অনেক সম্ভাবনাময়। সম্ভাবনাময় আমাদের অর্থনীতি। শ্রমজীবী মানুষ কঠোর শ্রমি। কঠোর শ্রম দিতে তাদের কার্পণ্য নেই। নিজেদের সবটা দিয়েই চেষ্টা করেন উন্নয়ন, উন্নতির। ব্যক্তি মানুষের উন্নতি দেশের উন্নতি। সব মানুষের একসঙ্গে ভালো থাকা মানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিও ইতিবাচক থাকা। এটা এখন এই বাংলাদেশে ঘটছে। প্রত্যাশার গতি সবসময় একইরকমভাবে এগোয় না। কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি এগোচ্ছে না এটা কেউ বলতে পারবে না। বরং বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিস্মিত দুনিয়া।
এখন যে প্রশ্নটি বারবার মানুষের মধ্যে উঠছে, অনেকেই আলোচনায় নিয়ে আসতে চাইছেন, আনছেনÑ এটাই কী বাংলাদেশের প্রত্যাশিত উন্নয়ন? আমিও মনে করি বাংলাদেশ আরও অনেক দ্রুত উন্নতি করতে পারত। কিন্তু কিছু বাঁধা আমাদের সামনে বড় সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। বিশেষত রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই বাংলাদেশের উচ্চমাত্রার উন্নতিতে বড় বাঁধা।
আওয়ামী লীগ সরকার সে জায়গাটিতে কাজ করছে। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন, অনিয়ম-দুর্নীতি, অসততা দূরীকরণে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে। স্থিতিশীল রাষ্ট্র বা সমাজ ব্যবস্থাও আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই বলে থাকেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য হলে এখন জননিরাপত্তায় যে অস্থিরতা চলছে, সেটা আর থাকবে না। রাজনৈতিক ঐক্যই পারে স্থিতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থার নিশ্চয়তা দিতে। রাজনৈতিক ঐক্য নিশ্চয়ই একটি রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্র, সমাজব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা, দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে রাজনৈতিক ঐক্য থাকাটা নিশ্চয়ই দরকার। কিন্তু এখানে কার সঙ্গে আমরা রাজনৈতিক ঐক্যটি করব? বিএনপি, জামায়াতের সঙ্গে? এটা কেউ দাবি করতেই পারেন, কিন্তু বাস্তবতার দিকে একটু খেয়াল রাখলেই এই দাবি কেউ করতে পারেন না।
বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে সবাই জানি। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিগত বছরগুলোতে যে রাজনীতি তারা করছে, তা জনপ্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তাদের ভূমিকা কী ছিল, কিভাবে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে, বাড়িঘর জ্বালিয়েছে তা কারও অজানা নয়। এই বাংলায় কিভাবে জঙ্গিবাদের চাষ হয়েছে, তা দেখেছে পুরো বিশ্ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা, একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা শাহ এ এমএস কিবরিয়া, গণমানুষের প্রিয় নেতা, শ্রমিক নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা, বাংলাভাইদের উত্থান, ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার, হাওয়া ভবনÑ লাখ তথ্যের মধ্যেও এই সামান্য কিছু তথ্য কি বিএনপি সম্পর্কে জানার জন্য যথেষ্ট নয়?
এরা এমনই। হত্যা, সহিংসতা, ষড়যন্ত্রই বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন। যেটা জনগণ বারবার দেখেছেন। বিশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগে দেখেছে। এখনও তাদের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। যে দলটি আজন্ম গণমানুষ বিরোধী রাজনীতি করে, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে পথ চলে, রাজনীতি করে, আওয়ামী লীগের মতো একটি প্রাচীন বটবৃক্ষকে ধ্বংস করার প্রয়াস চালায়, শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে তাদের সঙ্গে কিভাবে ঐক্য সম্ভব, এই প্রশ্ন দেশবাসীর প্রতি আমার রইল।
জামায়াত একটি রাষ্ট্রবিরোধী, তথা বাংলাদেশ বিরোধী সংগঠন। এই রাজনৈতিক সংগঠন একাত্তরে বাংলাদেশের জন্ম যন্ত্রণার সময় আমাদের পাশে ছিল না, আমাদের শত্রুদের সঙ্গে ঐক্য করেছিল। যে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হলো, ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারাল সেই সংগঠন, সেসব দলের নেতাদের সঙ্গে কী করে রাজনৈতিক ঐক্য হয়? কোনোভাবেই সম্ভব কী তাদের সঙ্গে ঐক্য? সম্ভব নয়। এই রায় আওয়ামী লীগকে জনগণ দেয়নি।
ঐক্যের একটা সংজ্ঞা থাকা উচিত। ঐক্য সে ধরনের মানুষের সঙ্গেই হওয়া উচিত, যে বা যারা এই দেশকে এগিয়ে নিতে চায়, দেশের মঙ্গল চায়, জনকল্যাণের রাজনীতি করতে চায়। এই ক্রাইটেরিয়াগুলো যারাই মেনে দেশকে সামনে এগোতে চাইবে, তার বা তাদের সঙ্গে ঐক্যে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। জনপ্রশ্নে যারা সহনশীল, ঐক্য হবে তাদের সঙ্গেই।
পরিচিতি : সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে মতামত গ্রহণ আশিক রহমান
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন