রমজানে সংযম কোথায়!
সেদিন বিকেলে ঈদ শপিংয়ে বেরিয়েছি, ছেলেকে নিয়ে। বাড়ির পাশেই অনেকগুলো শপিং মল। ঢুকেই দেখি এক কোনায় খুব ভীড়। কাছে যেতেই দেখি রকমারি ইফতার। ছেলের দিকে তাকালাম। বললাম, কিছু নেবে? ছেলে খুশি খুশি গলায় বলল, তোমার ইচ্ছে। ইচ্ছেটা বুঝলাম, বললাম, দেখো কি নেবে। চিকেন টিক্কা, চিকেন শাসলিক, চিকেন কাটলেট, ডিমচপ, চিকেন রোল পছন্দ করল। বিল হলো পাঁচশো সত্তর টাকা। ইফতার নিয়ে বেরুলাম। রাস্তার দুইপাশেও নানারকম ইফতার আয়োজন। প্রায় সবই তেলে ভাজা।
দেখে মনে হয় যেন খাদ্যেৎসব চলছে। অথচ বছরের বাকি এগার মাস এত খাবার দেখা যায় না। যেন খাদ্য নগরী। অথচ আমরা সাধারণভাবে জানি, রোজা সংযম। রোজা পালন করলে মানুষ পরস্পর সহানুভূতিশীল হয়। ধনীরা গরিবের অনাহারে অর্ধাহারের কষ্ট অনুভব করতে পারে। ফলে দান-সাদকা করতে উৎসাহিত হয়। রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ হিংসা, বিদ্বেষ, পরনিন্দা, ধুমপান আসক্তির মতো বদ অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে পারে।
অথচ চারপাশের অবস্থা দেখে মনে হয় এইসময় ধনীরা গরিবদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেন। কারণ, এত লোভনীয় সাজানো খাবারগুলো তারা শুধু দেখতে পায়। কিনতে পারে না। খেতে পারে না। একই সঙ্গে ঈদের দিনের খাবারেরও কোনো বিশেষত্ব থাকে না। কারণ, লেগরোস্ট থেকে শুরু করে সবই তো ইফতারে খাওয়া হয়ে যায়। দিন দিন এটা বেড়েই চলেছে। এসব খাবার খেয়ে সন্ধ্যায় অধিকাংশ মানুষই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ইফতারের পর কিছুই করতে পারেন না। আর মহিলারা তো দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ইফতার তৈরি করতে করতে ক্লান্ত, ইবাদত বন্দেগিও ঠিকমতো করতে পারেন না। এমন কি অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আসলে জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে চাইলে সুস্থতার কোনো বিকল্প নেই। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, দেশের জন্য, পৃথিবীর জন্য ভালো কিছু করতে হলে অবশ্যই আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে। সুস্থতা স্রষ্টার বড় নেয়ামত। ভুল পথে চলে আমরা যেন তা থেকে বঞ্চিত না হই।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন