কাউন্টারের কষ্ট লাঘবে চাই অনলাইন টিকেটিং
ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। বাস কাউন্টারে টিকিট কেনার জন্য হাজারো মানুষের ভীড়। কষ্টকর এক অভিজ্ঞতা। যারা স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে নাড়ির টানে শিকড়ে ফিরতে চান, ঈদের দিন তাদের জন্য এক চরম হতাশার বিষয় নির্দিষ্ট দিনের টিকিট না পাওয়া। টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকাগুলোর বাৎসরিক রিপোর্টের বিষয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই অনলাইনের যুগে কেন বাস, লঞ্চ ও রেলের টিকিটের জন্য মানুষকে ধর্ণা দিতে হবে বাস কাউন্টারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সবদিকেই তো এগোতে চাই আমরা। অনলাইনে এখন আমরা কিনছি বই, জামা, জুতাসহ নিত্যদিনের ব্যবহারিক অনেক কিছু।
অনলাইনে বাস-লঞ্চের টিকিট বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান ‘সহজ ডটকম’-এর সিইও মালিহা এম কাদিরের কাছে জানতে চাইলাম, কেন তারা বেশি টিকিট বিক্রি করছেন না? তিনি জানালেন, সহজ ডটকমের আওতায় আছে ২৯টি বাস অপারেটর। লঞ্চ অপারেটর আছে ৫টি। এসব অপারেটরের টিকিটের জন্য আপনাকে যেতে হবে না কোনো বাস কাউন্টার বা সদরঘাটে। তবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও একটি বাসের ৪/৫টির বেশি টিকিট তারা অনলাইনে দিতে পারছেন না। কেন তা পারছেন না তার সদুত্তর পাওয়া গেল না।
তবে খোঁজ নিয়ে জানলাম, বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটও এসএমএস এবং অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা থাকলেও এর সুফল পায় না যাত্রীরা। একই অবস্থা বাস-লঞ্চের যাত্রীদের। ঈদের আগে রাজধানী ঢাকায় যে যানজট, তা পেরিয়ে বাস কাউন্টারে পৌঁছানোর পর যদি টিকিট না মেলে তাহলে ওই ব্যক্তির আফসোসের শেষ নেই। কিন্তু বাস মালিকেরা কেন তাদের টিকিটি বেশি বেশি অনলাইনে ছাড়বেন না। এক্ষেত্রে বড় বড় বাস কোম্পানিগুলোই বেশি পিছিয়ে আছে। কেন গ্রিনলাইন, সোহাগ, শ্যামলীর মতো বাসের টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে না?
আমরা জানি, পরিবহন খাতে যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে একটা নৈরাজ্যকর অবস্থা চলমান। বিশেষ করে ঈদের সময় টিকিট কেনা এবং ঠিকভাবে হয়রানি ছাড়া গন্তব্যে পৌঁছানো এক সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাই যখন কোটি কোটি মানুষ এখন মোবাইল ফোনে অভ্যস্থ এবং এদের বড় একটি অংশ ইন্টারনেটে আসক্ত, তখন কেন মানুষ অনলাইনে বাস বা রেলের টিকিট অনলাইনে না কিনে ঘন্টার পর ঘন্টা টিকিট কাউন্টারে ধর্ণা দিবেন। যে দু’একটি প্রতিষ্ঠান এখন অনলাইনে বাসের টিকিট (সহজ ডটকম, বাস বিডি ডটকম ইত্যাদি) তারা একটি রুটে, একটি বাসে ২/৪টির বেশি টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানলাম, বাস কোম্পানিগুলোই অনলাইনে বেশি টিকিট বিক্রি করতে আগ্রহী নয়। আরও জানলাম, মালিকরা যতটুকুই বা চান কিন্তু কাউন্টারের সুপারভাইজার এবং অন্যান্য কর্মচারীরা এতে উৎসাহিত বোধ করেন না। অনলাইন বা কম্পিউটারাইজ ব্যবস্থায় টিকিট নিয়ে অনিয়ম কম হয়, তাতে আর্থিকভাবে মালিকরাই লাভবান হওয়ার কথা। তাই তারাই বেশি করে অনলাইনে টিকিট বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়াবেন, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন