সুন্দরবনে ২৫ হাজার জেলে পরিবারে হাহাকার
আসাদুজ্জামান স্বপন, শরণখোলা (বাগেরহাট) : সুন্দরবনের পাসপারমিট বন্ধ থাকায় বাগেরহাটের শরণখোলার প্রায় ২৫ হাজার জেলে পরিবারে হাহাকার চলছে। সম্প্রতি সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন এলাকায় পর পর চার বার অগ্নিকা-ের ঘটনায় সরকারি সিদ্ধান্তে বনের পাসপারমিট বন্ধ ঘোষনায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জেলেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী ওইসব জেলে পরিবারে এবার হবেনা ঈদ উৎসবও!
বেঁচে থাকার তাগিদে তারা কোনো উপায়ান্ত না পেয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। বেছে নিয়েছে আন্দোলনের পথ।
গতকাল সোববার দুপুরে কয়েকশ বেকার জেলে পাসপারমিট খুলে দেয়াসহ ৬ দফা দাবিতে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ করেছে। তারা প্রথমে শরণখোলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন পরে রায়েন্দা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে বক্তৃতা করেন রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও শরণখোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আসাদুজ্জামান মিলন, মৎস্যজীবী নেতা সোলায়মান ফরাজী ও জেলে সোবাহান হাওলাদার।
বক্তারা বলেন, সুন্দরবনে অগ্নিকা-ের সঙ্গে জড়িত মুষ্টিমেয় কিছু আগুন সন্ত্রাসীর কারণে আজ হাজার হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের অপরাধের দায়ভার নিরীহ জেলেদের বহন করতে হচ্ছে। জেলে পরিবারে দারুন হাহাকার শুরু হয়েছে। অনেকে পেটের দায়ে এলাকা ছেড়ে শহরে গিয়ে রিকশা চালাচ্ছে, দিনমজুরী করছে। কোনো জেলের ঘরে খাবার নেই। অর্থাভাবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। যারা সুন্দরবন ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়া জেলেদের দুর্দশার কথা কথা ভেবে দ্রুত পাসপারমিট খুলে দেয়ার জন্য সরকারে কাছে দাবি জানিয়েছেন। এদিকে, এবছরের ২৭ এপ্রিল থেকে এপর্যন্ত প্রায় দু’মাস সুন্দরবনের পাসপারমিট বন্ধ থাকায় এলাকার অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যেও মন্দাভাব দেখা দেিয়ছে। বলতে গেলে এ উপজেলার সব মানুষই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মসুন্দবনের ওপর নির্ভরশীল। তাই পাসপারমিট বন্ধ থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সবকিছুই অচল হয়ে পড়ে। সরকার সুন্দরবন রক্ষায় একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরী করে পাসপারমিট খুলে দিয়ে অর্তনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন করবে বলে এ অঞ্চলের মানুষ আশা করছেন।
জেলেদের ৬ দফা দাবিগুলো হচ্ছে, দ্রুত পাসপারমিট চালু, জাটকা মৌসুমে জেলেদের চালের পরিমান বৃদ্ধি ও প্রতিমাসে নগদ দুই হাজার টাকা প্রদান, স্মার্ট পেট্রোলিং অভিযান স্থায়ীকরণ, জেলেদের বিনা সুদে ঋণ প্রদান, জেলেদের পূনর্বাসন ও ভূমিহীন জেলেদের সরকারী খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া।
সুন্দরবন সুরক্ষা পরিষদের আহবায়ক নজরুল ইসলাম আকন বলেন, অচিরেই সুন্দরবনের পারসপারমিট খুলে দেয়া না হলে পেশাজীবীরা পেটের দায়ে অবৈধ পথ বেছে নেবে। এলাকায় অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাবে। সুন্দরবন আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।