তুর্কি সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে ৮ সিরীয় শরণার্থী নিহত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুর্কি বর্ডার গার্ডের সদস্যদের গুলিতে ৮ সিরীয় শরণার্থী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩জন শিশু, ৪জন নারী ও ১ জন পুরুষ রয়েছেন। যুদ্ধ কবলিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে তুরস্কের প্রবেশের সময় তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস নামক সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৬০জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার রাতে গুলিতে নিহত ৮ জনের মধ্যে ৬ জন একই পরিবারের সদস্য।
সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা রামি আব্দেলরহমান জানান, সংস্থার পক্ষ থেকে হাসপাতালে কর্মী পাঠানো হয়েছে। হামলায় নিহত ও আহতদের ভিডিও রয়েছে তাদের কাছে। কিন্তু ভিডিওতে শিশু থাকায় তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। সিরিয়ার অ্যাক্টিভিস্টদের একটি গ্রæপ দ্য লোকাল কোঅর্ডিনেশন কমিটিও গুলিতে ৮জন নিহত হওয়ার খবরের কথা স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, নিহত শিশুদের মধ্যে একজনের বয়স ছিল ৬ বছর।
সংস্থাগুলোর দাবি, অবৈধভাবে সিরীয় শরণার্থীরা তুরস্ক সীমান্ত পার হতে গিয়ে জর্ডান, তুরস্ক ও লেবাননের সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে নিহত হতে হচ্ছে। ফলে যুদ্ধকবলিত সিরিয়া থেকে শরণার্থীরা পালাতেও পারছেন না।
২০১৩ সাল থেকে তুরস্ক অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের সময় গুলি করা শুরু করে। গত বছর ব্রিটেনের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো শরণার্থীদের ঢল কমাতে তুরস্কের ওপর চাপ প্রয়োগ করার পর সীমান্তে গুলিতে নিহতের ঘটনা বেড়ে গেছে।
গত দুই বছরে তুরস্কে প্রায় দশ লাখ শরণার্থী প্রবেশ করেছেন। এদের প্রায় অর্ধেক সিরীয় শরণার্থী। চলতি বছরের মার্চে তুরস্ক শরণার্থীদের প্রবেশ ঠেকানো ও তুরস্ক হয়ে ইউরোপে প্রবেশ বন্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে প্রতিশ্র“তি দেয়। এরপর থেকেই ভিসা ছাড়া কোনও শরণার্থীদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না তুরস্ক।
তুরস্কের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গুলি বর্ষণের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে তিনি জানান, এখনও গুলিতে নিহতের ঘটনার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
ব্রিটিশ দৈনিক টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, পাহাড়ি পথে সিরিয়া থেকে তুরস্কে যাওয়ার সময় তাদেরকে গুলি করে তুর্কি সীমান্তরক্ষীরা। ওই পাহাড়ি পথটি চোরাচালানের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছে।
নিহতদের সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে তারা পাহাড়ি পথে তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্রতিদিনই তারা তুর্কি সীমান্তরক্ষীদের গুলির শিকার হচ্ছিলেন। এসব গুলির ঘটনায় অনেক মানুষ আহত হয়েছে।
মোবাইল তোলা ফুটেজে দেখা গেছে, দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ এক বাবা তার শিশু সন্তানকে বহন করছিলেন। গুলিতে আহত হওয়ার পর তিনি পেছনে ফিরে যান এবং চিকিৎসা সহায়তার জন্য ছোটাছুটি করছেন। এ দলের সঙ্গে থাকা আইনজীবী আব্দমুনেম কাশকাশ অক্ষত অবস্থায় তুরস্কে পৌঁছে জানান, সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা লোকজনকে তুর্কি সেনারা পথে পথে হত্যা করছে।
তুরস্কে বর্তমানে প্রায় ২৭ লাখ সিরীয় শরণার্থী রয়েছেন। আর বিশ্বের সবদেশ মিলিয়ে রয়েছে ৩০ লাখ শরণার্থী।
এদিকে, জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ৬ কোটি ৫৩ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়েছে। পুরো পৃথিবীর ১১৩ জন মানুষের মধ্যে একজন শরণার্থী। যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ শরণার্থীর রেকর্ড। বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শরণার্থীদের অর্ধেকই সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং সোমালিয়ার যুদ্ধে আক্রান্ত। প্রতিবেদন অনুসারে, ইউরোপে শরনার্থীদের ঢল নামলেও ওই শরনার্থীদের ৮৬ শতাংশই স্বল্পোন্নত বা মধ্যম আয়ের দেশে রয়েছেন।
গত বছর ১০ লাখ ১১ হাজার ৭০০ জন শরণার্থী সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। এছাড়াও স্থলপথেও ৩৫ হাজার মানুষ ইউরোপে প্রবেশ করেন বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)।