জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে শুধু ‘ক্রসফায়ার’ সমাধান আনতে পারবে না
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে শুধু ‘ক্রসফায়ার’ সমাধান আনতে পারবে না। তবে বিগত সময়ে যারা গুপ্তহত্যা, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে খুন হয়েছেন এবং অনেক বছর হয়ে যাওয়ার পরও বিচার পাননি তাদের পরিবারগুলো সাম্প্রতিক ‘ক্রসফায়ার’কে কিছুটা ইতিবাচক মনে করছেন। সার্বিকভাবে অনেকেই মনে করছেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এই ক্রসফায়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ক্রসফায়ার নিয়ে দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আমাদের অর্থনীতিকে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হত্যা মামলাগুলোর বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানান।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি সন্দেহে অভিযুক্ত কয়েকজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। এভাবে মৃত্যু না ঘটিয়ে তাদের স্বীকারোক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু বিচার করতে পারলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হতো এবং বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ত। এভাবে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার ঘটনা প্রশ্ন ও অবিশ্বাস তৈরি করেছে। তবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র আক্রমণ হলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে পারে। মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষককে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় স্থানীয় জনতা যেই তরুণকে পুলিশে দিয়েছে সেই তরুণ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। তাকে যেমন বাঁচিয়ে রাখা উচিৎ ছিল, একইভাবে অভিজিৎ রায় হত্যায় জড়িত সন্দেহে যাকে মেরে ফেলা হয়েছে, তাকেও বাঁচিয়ে রাখা জরুরি ছিল। সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, বছরের পর বছর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ভিকটিমের পরিবারগুলো হতাশ হয়ে পড়েছিল। তাই ক্রসফায়ারে জঙ্গি নিহত হওয়ায় স্বজন হারানো পরিবারগুলো কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে হয়তো কিন্তু সবাই চান দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি। সাবেক এই বিচারপতি ক্রসফায়ারকে আইন সঙ্গত মনে করে বলেন, পুলিশ বা র্যাব যখন কোনো আসামিকে নিয়ে কোথাও অভিযানে যায়, দেখা যায় আসামির সঙ্গীরা অস্ত্র হাতে পুলিশের উপর হামলা করছে। সেসব ক্ষেত্রে পুলিশ বা র্যাবকে আত্মরক্ষার অধিকার দিয়েছে আইন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, জঙ্গিরা ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার ঘটনার মাধ্যমে একটি চক্র সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। সরকার জঙ্গি ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে। অথচ একজন জঙ্গিকে ধরার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ না করেই, তার কাছ থেকে তথ্য না আদায় করেই ক্রসফায়ারে দেওয়া হলো। এটির উদ্দেশ্য ভালো নয়। তিনি বলেন, জঙ্গিদের ধরে ক্রসফায়ারে নয়, আইনের মুখোমুখি করেই বিচার করতে হবে। একজন মানুষ যে ধরনের অপরাধীই হোক, তারও মানবাধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
আইন কমিশনের সদস্য ড. এম শাহ আলম বলেন, ক্রসফায়ারে জঙ্গি মারা বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। আদালতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে, যেগুলো বছরে পর বছর পার হলেও বিচার শেষ হচ্ছে না। মামলাগুলো কেন নিষ্পত্তি হচ্ছে না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বারবার।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, প্রতিটি অপরাধের বিচার করার জন্য আইন রয়েছে। রাষ্ট্র আইনগতভাবেই এসব অপরাধের বিচার করবে। বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করাই হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান উপায়। সম্পাদনা: সৈয়দ নূর-ই-আলম