এবারও বিভিন্ন পরিবহনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু
আনিসুর রহমান তপন : ঈদ উপলক্ষে নাড়ির টানে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নগরবাসী। এজন্য গতকাল সোমবার থেকেই বাসের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন অনেকেই।
প্রসঙ্গত, গতকাল থেকে ঈদ উপলক্ষে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।
এদিকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে দেখা গেছে ভিন্ন রূপ। ভোর থেকেই গাবতলী, মিরপুর টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, মালিবাগ, ফকিরাপুল, শ্যামলী এলাকার বাস কাউন্টারগুলোয় দেখা গেছে টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। সাধারণত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটের টিকিট পাওয়া যায় এসব কাউন্টার থেকে।
সকাল ৮টা থেকে এসব কাউন্টারে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, রংপুর রুটে অগ্রিম টিকিট দেওয়া হয়। এসময় এসব স্থানে দেখা গেছে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। বিশেষ করে হানিফ পরিবহন, নাবিল পরিবহন ও এসআর কাউন্টারে ভিড় অনেক বেশি।
তবে বিভিন্ন অনলাইনেও শুরু হয়েছে অগ্রিম টিকিট বিক্রি। সহজ ডটকম, বাসবিডি ডটকম ডটবিডি, বিডি টিকেটস ডটকম নামের অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে অগ্রিম টিকিট।
পাশাপাশি শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, ন্যাশনাল ট্রাভেলস ও দেশ ট্রাভেলস তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত।
উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৬০টিরও বেশি রুটে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও একজন যাত্রী চারটি টিকিটের বেশি নিতে পারবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছে বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সরেজমিন বিভিন্ন টিকিট কাউন্টারে অবস্থানরত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ যাত্রী ৩০ জুন থেকে ৪ জুলাই এই পাঁচ দিনের টিকিট নিতে বেশি আগ্রহী। টিকিট ফুরিয়ে যাবার আগেই যেন নিজ নিজ টিকিট সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য ভোররাতে সেহেরি খেয়েই বাস কাউন্টরে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। অবশ্য অনেকেই আবার লাইনে না দাঁড়িয়ে টাকার বিনিময়ে অন্যকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।
বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রসঙ্গে জানান, পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল থেকেই অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায়। তিনি বলেন, এবার যাত্রীদের সতর্কতার জন্য আমরা বাস টার্মিনালে প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করেছি। যেমন কাউন্টার ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে টিকিট না নেওয়া, অপরিচিত কারও কাছ থেকে কিছু না খাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে যাত্রীদের সচেতন করা হচ্ছে। রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, তবে মূলত ২ থেকে ৪ জুনের টিকিটের চাপ বেশি। আর প্রথম দিন হওয়াতে সামাল দিতে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে। হানিফ পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারের কর্মকর্তা বশিয়ার বলেন, ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যাত্রীরা। টিকিট বিক্রিতে চাপ অনেক।
এদিকে সায়েদাবাদ ও মহাখালি বাস টার্মিনালে অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের জন্য ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি।
সরেজমিন ঘুরে অধিকাংশ কাউন্টারই দেখা গেছে ফাঁকা। চলতি দিনের টিকিট সংগ্রহে বেশকিছু যাত্রীকে কাউন্টারের সামনে দেখা গেলেও অগ্রিম টিকেট সংগ্রহকারী কাউকে দেখা যায়নি। সায়েদাবদের শ্যামলী পরিবহনের সিলেট জোনের অপারেশন ইনচার্জ চঞ্চল ফাঁকা কাউন্টার দেখিয়ে বলেন, দেখতেই পাচ্ছেন এখানে অগ্রিম টিকিটের যাত্রী নেই, তবে ২০ রোজার পর অগ্রিম টিকেট বিক্রি এবং ২৫ রোজার পর ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। প্রায় একই সুরে হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ওয়াহাব জানান, এখনও ঈদের অনেক দিন বাকি থাকায় যাত্রীরা অগ্রিম টিকিট কিনতে শুরু করেননি। অন্যান্য বছরও ২০ রোজার আগে সাধারণত অগ্রিম টিকেট বিক্রির চাপ থাকে না। তবে ২০ রোজার পরে টিকেট বিক্রি বাড়বে।
একই অবস্থা দেখা গেছে মহাখালী বাস টার্মিনালে। অন্যান্য টার্মিনালে অগ্রিম টিকিটের ভিড় থাকলেও এখানে তার রেশ নেই।
ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক মো. মানিক মিয়া জানান, মহাখালী বাস টার্মিনাল, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এখনও ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট বিক্রির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তার দাবি, এ কারণে এখান থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়নি। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে চলাচলকারী একতা ট্রান্সপোর্টের সুপারভাইজার আলতাফ জানান, মালিকপক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত না আসায় অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। তবে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিক্রি শুরু হতে পারে। এসআর ট্রাভেলসে খোঁজ নিয়েও একই তথ্য জানা যায়।
এদিকে কিছু কিছু কাউন্টারে প্রতিবছরের মত এবারও দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, নওগাঁ ও রংপুর অঞ্চলের টিকিট প্রতি ৫০ থেকে ১৮০ টাকা করে বেশি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আবার রাজশাহী অঞ্চলের টিকিটপ্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া নিচ্ছে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানি। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি