সহিংসতার শিকার হয় সাধারণ মানুষ
এম কবির : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনমাসে বিএনপির হরতাল-অবরোধ-আন্দোলন চলাকালীন সময়ে পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী মারা গেছে ১১৯ জন। এর মধ্যে পেট্রলবোমায় নিহত হয়েছে ৫৪ জন, ক্রসফায়ারে ২৪ জন, পুলিশের গুলিবর্ষণে ২০ জন এবং সন্ত্রাসীদের হামলায় ও ট্রাক থেকে ফেলে দিয়ে ২১ জনকে হত্যা করা হয়েছে।
গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন পত্রিকায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর যে প্রতিবেদন ছাপা হয় তাতে বলা হয়েছে, গত এক মাসে (২৫ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশে ৬০ জন নিহত হয়েছে ক্রসফায়ারে। আর গত দুই সপ্তাহে কথিত বন্দুকযদ্ধে নিহত হয়েছে ২০ জন।
২০১৫ সালের ২৭ এপ্রিল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, গতবছর ৬ জানুয়ারি থেকে ১৩ এপ্রিল খালেদা জিয়ার ডাকা অবরোধ-হরতাল সফল করতে সন্ত্রাসীরা ২৪৭টি পেট্রলবোমা ও ২৫৬২টি ককটেল নিক্ষেপ করেছে। তারা ১৩৮টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে, ৮২০টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে, ১৮টি রেল নাশকতা করেছে, নৌ-পথে করেছে ৬টি নাশকতা। ৭০টি সরকারি স্থাপনায় হামলা করেছে, ১৫টি আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও কমপক্ষে ২০ জন আওয়ামী নেতাকর্মীর বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়, রেহাই পায়নি হিন্দু-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও। তাদের উপর কমপক্ষে ২৩টি হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। অগ্নিদগ্ধ হয়েছে ৩৯৯ জন, নিহত হয়েছে একশরও বেশি মানুষ। ‘এই অমানবিক নাশকতাকালে হাতেনাতে যে ৫৭৯ জন গ্রেফতার হয়েছে, তারমধ্যে ৩৬৩ জন বিএনপির নেতাকর্মী এবং ২০৫ জন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী’, পুলিশের উপাত্তের বরাতে জানান তথ্যমন্ত্রী।
অন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনে গত দুই বছরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে দুই শতাধিক লোক নিহত হন। এর মধ্যে গতবছর ৬ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯২ দিনের অবরোধ কর্মসূচি ও দফায় দফায় হরতাল পালনকালে দেড় শতাধিক মানুষ নাশকতায় নিহত হন। এদের মধ্যে ৯০ ভাগই ছিলেন সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষ।
অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের তিন মাসের টানা অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে মারা যান ১৬৫ জন। এদের মধ্যে ১০২ জন পেট্রলবোমার শিকার হন। বাকিরা ককটেল, সংঘর্ষ, গুলি এবং বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে মারা যান। অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ১০২ জন সাধারণ মানুষের মধ্যে ৪৩ জন ছিলেন বাস বা অন্য কোনো বাহনের যাত্রী। নিহতদের মধ্যে চালক ছিলেন ১০ জন এবং চালকের সহকারী ১২ জন। হতদের মধ্যে নয়জন শ্রমিক বা দিনমজুর, একজন পথচারি, পাঁচজন ছাত্র, দুজন প্রবাসী, সাতজন শিশু, নয়জন নারী ও একজন পুলিশ সদস্য।