কৃষক যেন উৎসাহ না হারায় : রাষ্ট্রপতি
দীপক চৌধুরী : কৃষক যাতে উৎসাহ না হারায় সে লক্ষ্যে ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, কৃষকের মঙ্গলের জন্য ফসল যেমন দরকার, তেমনি ভালো দামও একান্ত প্রয়োজন। চাউলের দাম কম থাকলে আমরা সবাই খুশি থাকি। কৃষিবিদ দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
‘সোনার বাংলা’ গড়তে কৃষকদের ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাউল উৎপাদন করে আমরা কী কখনও তাদের কথা ভেবে দেখি। অনেক সময় ধান চাষ করে কৃষক উৎপাদন খরচ ওঠাতে পারছে না।
তিনি বলেন, অনেক সময় কৃষি শ্রমিকের অভাবে জমির ফসল উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই কৃষকরা যাতে উৎসাহ না হারায় সে ব্যাপারে সকলকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জলবায়ু সইতে পারে এমন ফসলের বিভিন্নজাত আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করে আরও কৃষি গবেষণা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য কৃষিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, পরিবর্তিত জরবায়ু পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ আমাদের কৃষির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ কারণে আমাদের কৃষি শিক্ষা আরও আধুনিক করা এবং পরিবর্তিত জলবায়ু সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের শস্য উদ্ভাবনের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, কৃষক বাঁচলেই দেশ বাঁচবে। আর দেশ বাঁচলেই আমরা বাঁচব। দেশ এগিয়ে যাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে, পরিণত হবে সোনার বাংলায়।
রাষ্ট্রপতি এ সময় তার লিখিত বক্তব্যের বাইরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর উদ্দেশে বলেন, আমি হাওরের মানুষ। কৃষকের সন্তান। হাওরে এক ফসল হয়। এবার বহু জমি পতিত রয়ে গেছে। সামনের বছর পতিত জমি বেড়ে যাবে। হাওরের কৃষকদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
কৃষি ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে ‘বাণিজ্যিকীকরণের’ দিকে এগিয়ে যাচ্ছেÑ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া এ রূপান্তরকে অনিবার্য ও বেগবান করছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার কৃষি খাতের উন্নয়নকে প্রভাবিত করছে। তাই কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে তথ্যপ্রযুক্তির ফলে উদ্ভাবিত সুবিধাকে কাজে লাগাতে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে কৃষির উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে এর অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে নিরন্তর প্রয়াস চালানোর কথাও বলেন রাষ্ট্রপতি।
কৃষি শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি নয়, নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের শেকড়ও বটে মন্তব্য করে আবদুল হামিদ বলেন, এ প্রসঙ্গে আমি একটি চীনা প্রবাদ উল্লেখ করছি, ‘জাতীয় উন্নতি ও সম্পদ একটি গাছের ন্যায়। কৃষি তার মূল, শিল্প তার শাখা এবং বাণিজ্য তার পাতা। মূলে ক্ষত দেখা দিলে পাতা ঝরে যায়, শাখা ভেঙে পড়ে এবং গাছ মরে যায়’। তাই আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কৃষি খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সকলকে নিরন্তর প্রয়াস চালাতে হবে।
কেআইবির ওই অনুষ্ঠানে কৃষিতে অবদান রাখার জন্য পাঁচজন ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের হাতে পদক তুলে দেন রাষ্ট্রপতি।
পদক পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ ও ইনফোটেইনমেন্ট।
ব্যক্তিরা হলেনÑ নাটোরের কৃষক সেলিম রেজা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এম মোফাজ্জল হোসেন, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হারুন রশীদ, সিলেটের কৃষি উদ্যোক্তা আলীমুল এহছান চৌধুরী ও ফরিদপুরের নারী কৃষক আলেয়া বেগম।
এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ আব্দুর রাজ্জাক, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান এবং কেআইবির মহাসচিব মোহাম্মদ মোবারক আলী। সূত্র : বাসস ও বিডিনিউজ