২৩ জুন বসছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চম পার্টনারশিপ ডায়ালগ
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : আর মাত্র দুদিন বাকি। এরপরই বসছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চম পার্টনারশিপ ডায়ালগ। ওই আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ছাড়াও প্রাধান্য পাবে বাংলাদেশের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি। সেই সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসতে পারে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা। এই সব ঘটনায় বাংলাদেশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তদন্ত কতদূর, কত সংখ্যক অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে কি নাÑ তাও জানার চেষ্টা করবে। প্রাধান্য পাবে জুলহাজ হত্যাকা-ের তদন্তের অগ্রগতির বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সহায়তা করবে সেই ব্যাপারে আবারও আগ্রহ জানাবে। এই ডায়ালগে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল যোগ দেবেন। এর প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি থমাস এ শ্যানন।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এই ধরনের হত্যাকা- বন্ধের বার্তা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলেন জন কেরি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জুলহাজের পরিবারকে চিঠি দিয়েছেন। সেখানেও উদ্বেগের কথাই প্রকাশ পেয়েছে। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশ সফর করে সরকারকে সন্ত্রাস দমনে একসঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এ পর্যন্ত পাঁচ দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে স্ক্ষাাৎ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে সন্ত্রাস দমনের জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ সরাসরি কোনো সহযোগিতা নিতে চাইছে না। তবে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমেও সহায়তা নিতে চেয়েছে। তাদের ছাড়াও মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন মুখ্য উপসহকারী মন্ত্রী উইলিয়াম ই টড ঢাকা সফর করেন। তার পর ঢাকা সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কূটনৈতিক নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী গ্রেগরি স্টার। তাদের এই বছরের উদ্বেগটা অন্য সব বারের চেয়ে বেশি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জন্য প্রেস্টিজ রুট ছিল ঢাকা-নিউইয়র্ক রুট। এই রুট চালুর ব্যাপারে বাংলাদেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের বিমানবন্দরের ক্যাটাগরি এতে উন্নীত করা না হলে ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হবে নাÑ এই বিষয়টিও বার বার তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছেÑ শর্ত পূরণ না হলে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হবে না।
আগামী ২৩ জুন থেকে পার্টনারশিপ ডায়ালগ শুরু হবে। এই সংলাপ হবে ৩ ধাপে। দুদিন ধরে চলবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের তরফ থেকে প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্রকে নিশ্চিত করবেÑ দেশে বিদেশি সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সব ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে কূটনীতিকপাড়ার ও সকল দূতাবাস এবং এর আশপাশের এলাকার নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
তাদেরকে জানানো হবে, ব্লগারসহ অন্যান্য টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনার তদন্ত চলছে। ৩৭টি ঘটনার মধ্যে ৩৪টি ঘটনার মামলার অভিযোগপত্র তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো আদালতে জমা দেওয়া হবে। অপরাধীদের কেউ পার পাবে না। বিচারের মুখোমুখি করা হবে ও তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবেÑ সেই ব্যাপারেও বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরবে। সরকার সব ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও অবহিত করা হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর ডায়ালগে কী ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে সেই সব দিক বিবেচনা করেই তারা সকল প্রস্তুতি নিয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে যারা অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তারা মনে করছেন, ২০১২ সাল থেকে নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন সহযোগিতাÑ ওই তিনটি ধাপে আলোচনা হয়। অন্যান্য বারের মতো এবারও এই সব বিষয় আলোচনায় থাকবে। এর ব্যতিক্রম হবে না। আর এই কারণে সামগ্রিক বিবেচনায় কিছু নতুন বিষয় যোগ হতে পারেÑ এই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।
এই সবদিক বিবেচনা করে বাংলাদেশে যে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে, আসামিদের গ্রেফতার করার বিষয়টিও তুলে ধরবে। রাজনৈতিকভাবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নিÑ সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে।
বাংলাদেশ ক্রসফায়ার কিংবা বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- করছে নাÑ সেটাও জানাবে। হাতকড়া পরা প্রকাশিত ছবি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশ্ন তুলতে পারেÑ এই ব্যাপারে কী জবাব দেওয়া হবে সেই ব্যাপারেও প্রস্তুতি রয়েছে।
যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র সচিব কী বক্তব্য দেবেন সেটা আগেভাগেই ঠিক করে যাচ্ছেন। এই ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিককালের কয়েকটি ক্রসফায়ারের ব্যাপারেও তাদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে মার্কিন সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান নিজের বাসায় নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর তার খুনিকে ধরা হয়েছে কি না, কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছেÑ এই ব্যাপারেও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল তথ্য নিয়ে যাচ্ছে যাতে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট হয়। বাংলাদেশের উপর যেন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ না বাড়েÑ এ জন্য প্রতিনিধি দল সতর্ক রয়েছে।
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই জন্য তাদের নিরাপত্তা জোরদারে নিজেদের নিরাপত্তারক্ষীদের অস্ত্র বহনসহ নিজস্ব নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার বিষয়টি বাংলাদেশকে জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই তারা সেটি করবে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কর্মকর্তা বাংলাদেশে রয়েছেন তাদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। যারা তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে তারা যেন আধুনিক অস্ত্র বহন করতে পারেনÑ সেই অনুমতিও চাওয়া হয়। যদিও বাংলাদেশের তরফ থেকে এই ব্যাপারে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে এর আগে কখনও এই ধরনের সুযোগ দেওয়ার নজির নেই বলেও জানানো হয়েছে। এই ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হবে। দুই পক্ষের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে। সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় নেতাদের হত্যার তদন্তের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ যে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে সেই ব্যাপারেও আলোচনা করা হতে পারে।