তিস্তা নিয়ে মমতার মন গলাতে তৎপর দিল্লি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন গলাতে আবারও তৎপর হয়েছে দিল্লি। বহু প্রতীক্ষিত এই চুক্তিটি শিগগিরই সেরে ফেলা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ফের জল গড়ানো শুরু হলো। বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রায় এক বছর পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরজায় ফের কড়া নাড়তে যাচ্ছে কেন্দ্র। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আজ জানিয়েছেন, নির্বাচনি ব্যস্ততার কারণে প্রায় এক বছর মমতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বহু প্রতীক্ষিত এ চুক্তিটি শিগগিরই সেরে ফেলা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।’
এতে আরও বলা হয়, গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে দুদেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরে সাক্ষী হয়েছিলেন মমতা। সেই সময়ই তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার বাংলাদেশের বিরোধী নয়। তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে দুদেশের চুক্তির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, রাজ্যের স্বার্থ বিবেচনা করে তবেই এ ব্যাপারে এগোনো হবে। আজ তিস্তা চুক্তি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ খুলেছেন সুষমা স্বরাজ। বিদেশমন্ত্রীর কথায়, ‘তিস্তা নিয়ে তিন পক্ষের মতামত এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হওয়াটা জরুরি। তিনটি পক্ষ হলোÑ বাংলাদেশ, ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন থাকায় দীর্ঘদিন মমতার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা যায়নি।’
সেই ব্যস্ততা মিটে যাওয়ার পর ফের কথা শুরু করা হচ্ছে বলে জানান সুষমা। তিনি বলেন, ‘ভোটে জয়লাভ করে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছেন মমতা। তিনি নিজেও বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। তা ছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতার সম্পর্কও খুব ভালো। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও তিনি হাসিনাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন।’
সেই জন্যই তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বেশ আশাবাদী। সুষমা জানিয়েছেন, নিজেদের মধ্যে তিস্তা নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করার জন্য এটাই সব চেয়ে ভালো সময়।
আনন্দবাজার জানায়, সংসদের বাদল অধিবেশন চলাকালীন বা তার আগেই দিল্লি আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর এই প্রথমবার তিনি বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গটি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই উঠবে। তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির তিনি যে বিরোধী নন, সে কথা আগেই চিঠি দিয়ে মোদিকে জানিয়েছিলেন মমতা। সেই সঙ্গে কিছু সমাধান সূত্রের কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। আলোচনা হবে সেগুলোর বাস্তব দিকগুলো নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চাষবাস তিস্তার জলের উপর নির্ভরশীল। অথচ তিস্তার জলের একটা বড় অংশ আগেই টেনে নেয় সিকিম। সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গে পৃথক জলাধার তৈরি করার প্রস্তবও মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন।
পত্রিকাটি আরও জানায়, মনমোহন সিংহের জমানায় তিস্তা নিয়ে যে সমাধান সূত্রটি তৈরি হয়, তাতে বলা হয়েছিল শুকনো মরসুমে নদীতে যতটা জল থাকবে, তা সমান ভাগে ভাগাভাগি হবে দুই দেশে। যার মধ্যে আবার প্রত্যেক দেশের প্রাপ্য অংশ থেকে চার ভাগের এক ভাগ জল বরাদ্দ করা হবে নদীখাতে নাব্য বজায় রাখতে চার্জিং-এর জন্য। তখন মমতা এ প্রস্তাবে রাজি হননি। তার যুক্তি ছিল শুকনো মরসুমে তিস্তায় কার্যত জল থাকেই না। আর বর্ষার সময় বাংলাদেশ জল পায় প্রকৃতির নিয়মেই। তাই সমস্যাটা মূলত শুকনো মরসুমেই। কেন্দ্রের তরফ থেকে মমতাকে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে, তিস্তা চুক্তি করা গেলে ওই নদী সংস্কার এবং জল সরবরাহের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে বিপুল ঋণ পাওয়া যাবে। ফলে এখন তিস্তা প্রকল্পে উত্তরবঙ্গের যে ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে জল যায়, ভবিষ্যতে তার পরিমাণ ৯ লাখ হেক্টরে দাঁড়াবে।
মমতা নিজে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, ইউপিএ জমানায় রাজ্যের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই যেভাবে চুক্তিটি করার চেষ্টা হচ্ছিল, তাতে এ পার বাংলার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। তার বক্তব্য, তিস্তার জলের ভাগ কী হবে, আলোচনার মাধ্যমেই সেটা ঠিক হওয়া উচিত। প্রায় এক বছর পর কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সেই আলোচনাই ফের শুরু হতে চলেছে। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ