কেন তারা জঙ্গি হয়!
চেকপোস্ট চলছে। আমার অফিসার তাকে দাঁড় করালেন। তাকিয়ে দেখলাম, টুপি, পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরা। কিছুটা ভঙ্গুর শরীর।
পাশে একটা তেলের পাম্প। সেখানে হুজুরকে আসার জন্য অনুরোধ করা হলো। তেলের পাম্পের নিচে খোলা জায়গা। আমি একটা আসনে বসলাম। হুজুরকে একটায় দেওয়া হলো। প্রথমে বসতে চায়নি, অনুরোধ করায় পরে বসল। হুজুর কিছুটা ভয়ে আছেন। আসনে বসেই জানতে চাইলেন, আমার কী অপরাধ?
বললাম, কোনো অপরাধ নয়। আপনার সঙ্গে গল্প করব। এ কথা শুনে সে বিশ্বাস করেছে বলে মনে হলো না। চেহারাটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন করে তাকিয়ে থাকল। কাপড়ের পুটলিটা তার এক হাতে ধরা।
সময়টা মতিঝিলে হুজুরদের এক মহাসমাবেশের দিন দুপুর, ২০১৩ সাল। স্থান বাবুবাজার ব্রিজের দক্ষিণ পাশে কেরানীগঞ্জ থানার কদমতলা। অল্পসময় তার সঙ্গে কথোপকথনের মূল বিষয়গুলো এখানে তুলে ধরলাম; ‘আমার সঙ্গে কথা বলার তার হাতে সময় নেই। তার হুজুর তাকে বলেছে, চিড়া আর পানি নিয়ে মিছিলে আসতে। পাঁচ সাতদিনও থাকতে হতে পারে। চিড়া আর পানি খেয়ে কাটাতে হবে। এর বেশিকিছু দেবার নেই। আল্লাহর পথে না খেয়ে মরলেও ক্ষতি নেই, বেহেস্ত পাওয়া যাবে। পৃথিবী বড়ই ক্ষণস্থায়ী।’
… আরও অনেক কথা।
আমি কথার মাঝে তাকে কোক আর বিস্কুট খেতে বললাম। সে বলল, অন্যকিছু খাওয়া হুজুরের নিষেধ। বললাম, হুজুর যদি বলে না খেয়ে মরতে? সে সহসায় বলল, তাও করব দরকার হলে…।
তার কথা আশ্চর্য হবার মতো। কারণ, হুজুরের হুকুমে সে মরতেও পারে! তার কাছে হুজুরের হুকুমই বড়!
সম্ভবত তখন সে মাদারীপুর বা বরিশালের কোনো একটা এলাকা থেকে এসেছে। সেখানকার একটি মাদ্রাসার ছাত্র সে। তিনদিন সময় লেগেছে তার এই পর্যন্ত আসতে। কারণ, তখন অবরোধ চলছিল। রাস্তায় গাড়ি ছিল না। হেঁটে, নদী পথে ও টেম্পু দিয়ে না খেয়ে আসতে হয়েছে।
তার এতো পথ হাঁটা! এতদিন খেয়ে না খেয়ে কাটানো! আরও কিছুদিন শুধু চিড়া ও পানি খেয়ে থাকার পরিকল্পনা! এইসব তার মধ্যে কিভাবে ঢুকল, একবার কী ভাবা যায়?
এ পর্যন্ত জঙ্গি হামলার ৯৫ শতাংশ ঘটনা ডিটেক্ট হয়েছে। সাজা হয়েছে ৬২ জনের মতো। ৯৫ শতাংশ ডিটেক্ট হওয়া মানে বলতে পারি, সকল জঙ্গিরা কোনো না কোনোভাবে আইনের আওতায় আসছে। তার অর্থ যেসব তরুণরা তা ঘটাচ্ছে, তারা পার পাচ্ছে না। সাময়িক পালিয়ে থাকলেও ধরা পড়ে যাচ্ছে।
যারা জঙ্গি হচ্ছে, তারা নিজেরাও জানে না, তারা যে ভুলটি করছে। তারা কোনো না কোনো পরিবারের সন্তান। তাদের মা বাবা ও ভাই বোন আছে। আছে আত্মীয়-স্বজন। তারা শুধু নিজেকে ক্ষতি করছে না। ক্ষতি করছে নিজের পরিবার আত্মীয়-স্বজনকেও।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও পুলিশ কর্মকর্তা
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন