অজয় দাশগুপ্ত
হঠাৎ করে ‘হিন্দুসমস্যা’ বা হিন্দুদের নিয়ে এত সমস্যা কেন বুঝতে পারা কঠিন। বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে তাদের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন, দেবদেবীর মূর্তি ভাঙার খবর দেখছি আমরা। বলে নেওয়া ভালো, কোনো আমলেই তারা নিরবিচ্ছিন্ন শান্তি বা সুখের সাগরে ছিল না। খোদ সংখ্যাগুরু মুসলমানরাই শান্তিতে নেই, আর এরাতো চুনোপুঁটি। কিন্তু একটা বিষয় হিসেবে মিলছে না। যাদের ভোট ব্যাংক হিসেবে তারা জামায়াত-বিএনপির চিরশত্রু, সে লীগের লোকেরা কেন এদের ওপর এতটা নির্মম। পত্র-পত্রিকা বা মিডিয়া খুললেই চোখে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতা পাতি নেতাদের হিন্দু নির্যাতন ও জমিজমা দখলের খবর। বলাবাহুল্য, নারীলোভ বা নারী নিগ্রহও থেমে নেই।
অবাক হবার ঘটনাটা অন্যত্র। যেসব নেতারা এতদিন এগুলো নিয়ে কথা বলতেন, যাদের আমরা সেক্যুলার সমাজতান্ত্রিক মনে করতাম তারা এখন নিশ্চুপ। ভাবখানা এই, এ আমলে এ নিয়ে আবার বলার কি আছে? সাংবাদিক, শিক্ষক সাধারণ হিন্দুদের ব্যাপারে মানুষ ফুঁসে ওঠার পর সরকারি দল গাছাড়া মন্তব্য বা নীরব উপকার করলেও মুখ খোলে না। ফলে এ সুযোগে একদল নেমেছে পুরোহিতসহ ধার্মিক ও সাধু নিধনে। আর একদল এই ইস্যুতে পরদেশের সাহায্য চাইছে। কি মুশকিল। দুই নেত্রীর ভেতর বনিবনা না হলে, সিনে আসে ব্রিটিশ আমেরিকা। জামায়াতি বা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ঠেকাতে আসে কেরির ফোন। এখন হিন্দু বাঁচানোর নামে একদল নেমেছে ভারত বন্দনায়। মহাজোট গঠন করে দেবনগরী বা হিন্দি ভাষায় ব্যানার লিখলেই মারামারি বা জমিদখল থেমে যাবে? এটা তারা জানে যে কিছুই হবে না। তবু সবদিকে যখন বিপদ আর কোনো ধরনের সমঝোতা বা জাতীয় ঐক্য নেই, তখন সাম্প্রদায়িকতাও নতুন রূপ ধারণ করছে।
হিন্দু না হলে যারা একাত্তরে রাজাকার হতেন তাদের আচরণে বিপদ বাড়বে। নিরীহ সংখ্যালঘুদের বাঁচানোর বিষয়ে অনাগ্রহী রাজনীতি বা সমাজও পার পাবে না।
বাংলাদেশ এজন্য স্বাধীন হয়নি।
লেখক : সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন