ভুট্টো হিন্দু ছিলেন না মুসলমান!
ইমরুল শাহেদ : এমন প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও
প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তার শেষ যাত্রা নিয়ে। তার শেষকৃত্য কি নিয়মে সমাধা করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক। গত বই মেলায় প্রকাশিত বিনয় মিত্রের ‘সত্য অসত্য অর্ধসত্য’ বইটিতে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বিনয় মিত্র তার বইয়ের ৭২ ও ৭৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ক্ষমতাপাগল, ধুরন্ধর, বিশ্বাসঘাতক, ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ ভুট্টো নিজেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হন। ছয়জন সেনানায়ককে ডিঙ্গিয়ে, বিশ্বাসভাজন বলে তিনি যাকে সেনাপ্রধান করেছিলেন, সেই জিয়াউল হকই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন (জুলাই ’৭৭) এবং ৪ এপ্রিল ’৭৯ ফাঁসির দড়িতে ঝোলান। জেনারেল জিয়া ধারণা করতেন, ভুট্টোর জন্মদাত্রী যেহেতু ধর্মান্তরিত হিন্দু রমণী লক্ষ্মী বাঈ, তাই তার খতনা করা না-ও হতে পারে। এই সন্দেহ থেকে জিয়ার আদেশ মোতাবেক মৃত ভুট্টোর নিম্মাঙ্গের ছবি তুলে পরীক্ষা করা হয়েছিল, খতনার মাধ্যমে তিনি প্রকৃত মুসলমান হয়েছিলেন কিনা!
লারকানার প্রভাবশালী ভূস্বামী শাহনেওয়াজ ভুট্টোর সন্তান জুলফিকার আলী ভুট্টো বিশ্বখ্যাত বিদ্যাপীঠ অক্সফোর্ডের ছাত্র। আমেরিকাতেও লেখাপড়া করেছেন। ব্যারিস্টার হয়ে আইন ব্যবসা শুরু করেছিলেন সিন্ধু হাইকোর্টে। পেশায় সুনাম অর্জিত হওয়ার পর দৃষ্টি কাড়েন আইয়ুব খানের। আইয়ুবের মন্ত্রিসভায় বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন।
বিনয় মিত্র লিখেছেন, ১৯৬১ সালে ঢাকার আইনজীবী আবদুল আহাদের পতœী হুসনা শেখের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে এবং পরিচয় থেকে পরিণয়ের সূত্রপাত। কর্মব্যস্ত ভুট্টো ঢাকায় আসার সুযোগ পান না, তাই হুসনাই করাচি যান ঘনঘন। ব্যাপারটা জানতে পেরে ভুট্টোর স্ত্রী বেগম নুসরাত এই অবৈধ কাজ থেকে স্বামীকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে ভুট্টোর বিরুদ্ধে নালিশ জানান প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের কাছে। আইয়ুব তাকে ডেকে পাঠান এবং নুসরাতের সামনেই কড়া ভাষায় ধমকান। শেষে বলেন, হুসনার সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে আর মন্ত্রিত্ব রাখতে চাইলে হুসনাকে ছাড়তে হবে। ভুট্টো হুসনাকেই ছাড়লেন এবং মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন, এই অপমানের প্রতিশোধ তিনি নেবেনই। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করতে লাগলেন। পীরজাদা, ইয়াহিয়া, হামিদ, গুল হাসান প্রমুখ বড় বড় অফিসারের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুললেন।
ইতালির খ্যাতিমান সাংবাদিক ওরিয়ানা ফ্যালাসির মতে, ‘… তিনি ক্ষমতা ভালোবাসেন। তার কথা শুনে, আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, তার উদ্দেশ্য মহৎ। তিনি নির্ভেজাল সমাজতন্ত্র নির্মাণ করতে চান। কিন্তু এর পরপরই আপনি যদি করাচিতে তার লাইব্রেরিতে ঢোকেন, দেখতে পাবেন মুসোলিনি ও হিটলারের মহার্ঘ্য গ্রন্থগুলো যতœ সহকারে রাখা আছে এবং সেগুলো সোনালি মোড়কে বাঁধাই করা।’ সম্পাদনা : সুমন ইসলাম