মাছুম বিল্লাহ : প্রতীক্ষিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির উজ্জ¦ল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিস্তায় বাধা মমতা ব্যানার্জি গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন। শিগগিরই এ চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে আভাস পাওয়া গেছে। তবে এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশ কত ভাগ পানি পাবে তা এখনও পরিষ্কার নয়।
একবার বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৪৮ শতাংশ পাবে আর ভারত পাবে ৫২ শতাংশ। আরেকবার বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশ পাবে ২৫ শতাংশ আর ভারত পাবে ৭৫ শতাংশ। আর অন্য সময় বলা হচ্ছে ৩৭.৫ শতাংশ ও ৪২.৫ শতাংশ। নাব্যর জন্য কখনও বলা হচ্ছে ২০ শতাংশ আবার কখনও বলা হচ্ছে ১০ শতাংশ। কিন্তু আসল কথা কেউ বলছেন না।
সেটি হলো, কোন পয়েন্টের পানি প্রবাহ বিবেচনায় আনা হবে। যদি গজলডোবা পয়েন্টের পানি ভাগাভাগি করা হয় তাহলে ৫০ শতাংশ পানি দিয়েও বাংলাদেশের কিছু হবে না। কারণ গজলডোবা বাঁধ নির্মাণের ফলে সেখান থেকে যে পানি বাংলাদেশ অভিমুখে আসে সেটি বলতে গেলে চুঁইয়ে চুঁইয়ে আসে। তাই গজলডোবা পয়েন্টের পানি ভাগাভাগিতে বাংলাদেশ কোনো অবস্থাতেই রাজি হতে পারে না।
পানি বিশেষজ্ঞরা এ সমস্যার সমাধানে দুটি পথ বাতলে দিয়েছেন। তার একটি হলো গজলডোবাসহ উজানের বাঁধগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং নদীর সমুদয় পানির ভাগ-বাঁটোয়ারা করতে হবে। আরেকটি হলো অববাহিকা ব্যবস্থাপনা। এই ব্যবস্থাপনায় ভারতের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নাই। কারণ অববাহিকার বৃহত্তর অংশ ভারতে অবস্থিত।
তারা বলছেন, তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণ করে অধিকতর জমি সেচ কাজের আওতায় আনার আশা পূরণ হয়নি। ১৯৯০ সালে ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যারাজ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ৯ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনার কথাছিল। তারা আনতে পেরেছে ৫ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর জমি। বাংলাদেশে ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমি ছিল সেচ কাজের টার্গেট। কিন্তু বাস্তবে আনা সম্ভব হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১১ হাজার হেক্টর। বাংলাদেশের প্রয়োজন ৪০ হাজার কিউসেক পানি।
পানি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৯৮৫ সালে যেখানে তিস্তার প্রবাহ ছিল ১৫০০০ কিউসেক, সেখানে আজ ৩০ বছর পর শুষ্ক মওসুমে প্রবাহ মাত্র ২৩২ কিউসেক। তিস্তার পানির প্রবাহ বা পরিমাণ ঠিকই আছে। হাজার হাজার কিউসেক পানি গজলডোবা থেকে উজানে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর ভিক্ষার চালের মতো বাংলাদেশের পাত্রে মাত্র ২৩২ কিউসেক আসছে। এই ভিত্তিতে যদি বলা হয় যে, বাংলাদেশ পাবে ৩৬ শতাংশ এবং পশ্চিম বঙ্গ পাবে ৩৯ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ তিস্তার নাব্যর জন্য রাখা হবে, তাহলে সেটি বাংলাদেশের জন্য মোটেও গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মনে করে বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পটভূমিতে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের আগে চুক্তির বিস্তারিত জনসমক্ষে প্রচার করা দরকার। জনগণকে জানতে হবে যে প্রস্তাবিত চুক্তিতে তাদের স্বার্থ কতখানি সংরক্ষিত হচ্ছে। সেটি না করে যেনতেন প্রকারে একটি চুক্তি সই করলেই সেটা মেনে নেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে জনগণ দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ