কারাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহার ঠেকানো যাচ্ছে না
আজাদ হোসেন সুমন : কারাগারের ভেতরের মোবাইল বাণিজ্য কোনো অবস্থায়ই ঠেকানো যাচ্ছে না। দেশের ৬৮টি কারাগারেই চলছে মোবাইল বাণিজ্য। কারাবন্দি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও গডফাদাররা কারাভ্যন্তর থেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিজেদের নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে। অভিযোগ উঠেছে এসব মোবাইল ফোন সরবরাহে জড়িত খোদ কারাগারের ভেতরে কর্তব্যরত কারারক্ষীরাই। কারা কতৃপক্ষ অবশ্য এর সত্যতা অস্বীকার করে দাবি করেছে, মোবাইল সরবরাহের অভিযোগে বেশ কজন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পর এখন আর বন্দিরা কারগারের ভেতর মোবাইল ব্যবহার করতে পারছে না।
সূত্র মতে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ছাড়াও দেশে ১১টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার একটি মহিলা কারাগার ও একটি হাই সিকিউরিটি কারাগার রয়েছে। অবস্থাসম্পন্ন বন্দিরা মোটা অঙ্কের বিনিময়ে কারাগারের ভেতরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সুবিধা পায়। আর সংশ্লিষ্ট সেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কারারক্ষীরা এ মোবাইল সরবরাহ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।
যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির দ- কার্যকর হওয়ার আগে কাসিমপুর কারাগারে অবস্থানকালে তার সেল থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করে কারা কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি চট্টগ্রামে পুলিশ সুপারের স্ত্রী মিতু হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। ওই জঙ্গি কারাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কথা আদালতে স্বীকার করেছে। নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ৭ খুন মামলার প্রধান আসামি লে. কর্নেল তারেক সাঈদের সেল থেকে সম্প্রতি কারা কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোন জব্দ করে এবং তাকে সতর্ক করে দেয়।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, কারাগারের ভেতরে সংশ্লিষ্ট জেলার বা জেল সুপার প্রতিদিন একবার এক ঘণ্টার জন্য কারাভ্যন্তর পরিদর্শন করেন। বাকি সময়টুকু ভেতরের সার্বিক চিত্র অজানাই রয়ে যায়। জেলের ভেতরে সেলগুলোতে কারারক্ষীরা পালা করে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ সময় অর্থলোভী কারারক্ষীরা নগদ অর্থের বিনিময়ে বন্দিদের মোবাইল সরবরাহ করেন। শুধু একটি কল করার জন্য তারা ৫শ টাকা নিয়ে থাকেন। চার থেকে ৬ ঘণ্টা সময়ের জন্য তারা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোন সরবরাহের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন কারাগারের বেশ কয়েকজন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সেটা বন্ধ হয়েছে। আমরা বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করেছি। ফলে ইচ্ছা করলেই কারাগারে আর মোবাইল ব্যবহার করা যায় না।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কারা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করে। তারা প্রায়ই কারারক্ষীদের হুঁশিয়ার করে কিন্তু অর্থলোভী কারারক্ষীরা এত কিছুর পরও মোবাইল ফোন সরবরাহ করে। ফলে কারাগারের ভেতরে মোবাইল ফোনের ব্যবহার কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। বিষয়টিকে শর্ষেতে ভূত থাকার সঙ্গে তুলনা করছেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি