আওয়ামী লীগ মানে ইতিহাস, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন
ফরিদুন্নাহার লাইলী
দেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই
দলের কা-ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিস্মরণীয় নেতৃত্বে বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পাকিস্তানের প্রথম প্রকৃত বিরোধিদল হিসেবে আওয়ামী লীগ আত্মপ্রকাশ করে। জন্মলগ্নে এই দলের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। ১৯৫৫ সালে এই দল ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। দলের পুনঃনামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।
বিশ্বে আর কোনো দ্বিতীয় দল নেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছাড়া, যারা কিনা একটি জাতির ভাষার জন্যে লড়েছে; একটি পতাকা নিজেদের করে পাবার জন্যে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৭১ সালে এই দলটি ছিল দেশের সকল মানুষের আশা ভরসার আশ্রয়স্থল। তাই বঙ্গবন্ধুর ডাকে এই দলের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ শত্রুমুক্ত করেছে। সেই তখন থেকে আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা বেশি। জনগণের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়েই আওয়ামী লীগের রাজনীতি। যদিও এই রাজনীতি চর্চার পথ সবসময় মসৃণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দেশ থেকে গণতন্ত্রের সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই সময়ে বিদেশে থাকায় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যায়। তারপর থেকে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে নিজ দেশে আসায় অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অনিরাপদ জেনেও সকল প্রাণভয় তুচ্ছ করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে নিজ দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। তারপর বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত পথের পূর্ণতাদানের শপথে আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন বাংলার মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে। বন্দুকের নলের কাছে গণতন্ত্র জিম্মি। তিনি অঙ্গীকার করেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণই হবে প্রজাতন্ত্রের মালিক। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুকন্যার গণতন্ত্র ও শান্তি পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর সেই পথচলায় অসংখ্যবার তাকে মৃত্যুকে জয় করতে হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত অবাধ নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই পাঁচ বছরে দেশে উন্নয়ন-অর্থনীতি এবং সামাজিক ক্ষেত্রে অর্জিত হয় চমকপ্রদ সাফল্য। তারপর বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় আসে ২০০১ এর জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন সামরিক শাসকের দ্বারা ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশ দুর্নীতিতে ভাসিয়ে দেয়। আর তাদের মিত্র জামায়াত দেশব্যাপী জঙ্গি বীজ বিস্তার করে। তার প্রমাণ জনগণ দেখেছে। দেশের ইতিহাসে বড় বড় সব জঙ্গি হামলা ওই মেয়াদে হয়েছিল। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যাবার স্বপ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এগিয়ে চলা। দেশের সবচেয়ে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে আওয়ামী লীগ সরকার। গত মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বিএনপি সরকারের সর্বশেষ বাজেট ঘোষণা হয় ৬৯ হাজার কোটি টাকার। আর বর্তমান সরকারের সর্বশেষ বাজেট ঘোষণা হয় তিন লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বোঝার জন্য আদতে আর কোনো উদাহরণ দরকার হয় না, বাজেটের আকারই তার প্রমাণ বহন করে। বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই জনগণের আশা আকাক্সক্ষা পূরণ হয় এবং জনগণের অধিকার সত্যিকার অর্থে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তাই বলতেই হয়, আওয়ামী লীগ মানে ইতিহাস, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন