মাননীয় ঢাকা সিটি মেয়র, আপনার মশা সামলান
ড. বদরুল হাসান কচি
মন্ত্রী পদমর্যাদা পাওয়ায় খ-িত ঢাকা সিটির দুই মেয়রকে অভিনন্দন। দুইজনই দীর্ঘদিনের জানাশোনা ব্যক্তি নগরবাসীর কাছে। শিক্ষিত, সজ্জন এবং সৃজনশীল মানুষ। দেশের রাজধানীতে নগরপিতার দায়িত্বপালন করার মতো যোগ্য অভিভাবক দুজনই। তারা নিজেরাও একটি তিলোত্তমা ঢাকা উপহার দেবার ঘোষণা দিয়েই নগরবাসীর নজরে আসার চেষ্টা করেছিলেন, সিটি নির্বাচনের ওই সময়টাতে।
গণতান্ত্রিক দেশে দীর্ঘসময় এই সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক চালিত ছিল। আমলারা জনগণের ভাষা বোঝেন না, বোঝেন আইন ও বিধিমালা। আর বিধিমালা মেনে চলতে গিয়ে ঢাকা সিটি একসময় নগরবাসীর কাছে অতিষ্ঠ নগরী হয়ে ওঠে। নাগরিক ভোগান্তি সীমা অতিক্রম করেছিল। যাক সেই ভোগান্তি লাঘবে সরকার এগিয়ে এসে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দিলেন নগরবাসীর পাশে থেকে সেবা করার জন্য। এলাকায় কোনো নাগরিক ভোগান্তি হলে মানুষ এখন তার জনপ্রতিনিধির দ্বারস্থ হতে পারছে। নগরপিতা মিডিয়ার সামনে এসে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবাবদিহি করছে। গণতন্ত্রের সুফল এখানেই।
এই শহর তিলোত্তমা হয়ে উঠুক, নগরবাসী খুব তাড়াতাড়ি তা প্রত্যাশা করে না। তবে কিছু কিছু ভোগান্তি আছে যা কিনা দ্রুত সমাধান না হলে বেঁচে থাকা অসহনীয় হয়। যেমন, রাজধানীর ভাঙাচুরা সড়কগুলোর সংস্কার, কোটি মানুষের প্রতিদিনকার খাবারের বর্জ্যগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং পরিচ্ছন্নতা। পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মশা নিধন। বলা যায়, নগরবাসীর মাথা খারাপ করে রাখতে এই একটি বিরক্তিকর প্রাণীই যথেষ্ট। মাঝে মাঝে মনে হয়, বসে বসে মশা মারাটাও নগরপিতাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। অথচ এই দায়িত্বটুকু পালনে নগরপিতারা দারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু এটা খুব কঠিন কাজ নয়, প্রতিদিন নিয়ম করে মশা উৎপত্তির জায়গাগুলোতে ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা করলে নগরবাসী রক্ষা পায়। আবার এমনও হতে পারে, কাউন্সিলর সাহেবদের প্রতি নিয়ম করে প্রতিদিন মশা নিধনে ঔষধ ছিটানোর নির্দেশনা থাকতে পারে কিন্তু সেটি যে মানা হচ্ছে না, তা হয়তো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মশামুক্ত পরিবেশে থাকা মাননীয় মেয়র মহোদয়গণ টের পাচ্ছেন না। মশার কামড় সাময়িক ব্যথা দিচ্ছে কেবল তা নয়, মশা মানবদেহে নানারকম রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে। ফলে অসুস্থ হচ্ছে নগরবাসী। যুক্ত হচ্ছে চিকিৎসা ব্যয়। তার মধ্যে এডিস মশা নামক একটি আতংক তো রয়েই গেছে। ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা যে আক্রান্ত হয়েছে কেবল সেই বুঝতে পারে কতটা ভোগান্তির। তাছাড়া অন্যদেশ থেকে আগত কোনো অতিথির কাছে, মশার কামড়ের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই কখনও ভোলার নয়। তাতে অবশ্যই আমরা খাটো হই।
মেয়র মহোদয়গণ সত্যিকারের নগরপিতা হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশা।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন