সরকারি অনুদান, বেসরকারি হাসপাতালের বাণিজ্য!
ডা. জাকির হোসেন
চিকিৎসাসেবা হলো সকল মহৎ পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে, অর্থের বিনিময়ে স্বাস্থ্য কার্যক্রমকে অতিমাত্রায় বাণিজ্যকরণ করা হচ্ছে। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা শুধু সরকারের পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে বাংলাদেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়। আশির দশকে এই অনুমতি দিতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা বিধিমালা প্রণয়ন করেছিল। অনুমতি দিতে গিয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা বলতে, সে সকল দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা উচিত যারা মানুষকে তাদের সাধ্য অনুসারে সেবা প্রদান করতে পারবে, এতে মুনাফা অর্জনই মূল উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই নীতিমালার কোনোরকম সংস্কার আজও সাধিত হয়নি। সেই সুযোগটি কড়ায় গন্ডায় কাজে লাগিয়েছে কর্পোরেট জগতের মুনাফা লোভী কিছু ব্যবসায়ী। তারা আজ স্বাস্থ্যসেবাকে পণ্যে পরিণত করেছে। স্বাস্থ্যখাত এর ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যকরণের অপর একটি কারণ হচ্ছে, স্বাস্থ্য বলতে অনেক সচেতন মানুষ শুধুমাত্র চিকিৎসক আর চিকিৎসাকেই চিন্তা করে। আজও পর্যন্ত চিকিৎসকের ফি নিয়ে যত আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে তার সিঁকি ভাগ সমালোচনাও হয়নি, এই সকল কর্পোরেট হাসপাতালের চিকিৎসা বাণিজ্য নিয়ে।
এই সকল প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা পেতে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হচ্ছে হাজারও পরিবার। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, এই সকল অনেক বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান গরিবের চিকিৎসার কথা বলে, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের কথা বলে প্রতিবছর সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনা নিয়ে থাকে। সাহায্য নিয়ে থাকে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তহবিল থেকে। এছাড়াও আর্থিক সাহায্য নিয়ে থাকে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে। অথচ এই সকল প্রতিষ্ঠানে গরিবের চিকিৎসা তো দূরের কথা গেইট দিয়ে ঢুকতে হলেও গেইটম্যানকে টাকা দিতে হচ্ছেÑ অসহায় মুমূর্ষু রোগী ও রোগীর স্বজনকে। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ দিনদিন বাড়ছে। আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে পরিকল্পিত খাদ্যাভাস গড়ে তোলা তো দূরের কথা তার পরিবর্তে প্রতিনিয়ত ভেজাল খাদ্য অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, কার্বহাইড্রেট, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি খাদ্য খেয়ে জীবন বাঁচাতে হচ্ছে। যার ফলে, আমরা আক্রান্ত হচ্ছি ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত মোটাজনিত রোগে। শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে, পেটের পীড়াসহ নানারকম জটিল কঠিন রোগে। আর এই সকল রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক বেসরকারি হাসপাতাল সরকারের প্রণোদনায় চললেও সফল হচ্ছে না সরকারের স্বাস্থ্যনীতি। তাই এখন থেকে এই সকল প্রণোদনার ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে আরও বেশি যতœবান হওয়া উচিত। সঙ্গে সঙ্গে যে সকল বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিবছর সরকারি সাহায্য পেয়ে থাকে, সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে আরও বেশি মনিটরিং করা অতীব জরুরি।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন