বিরোধিতা সত্ত্বেও চীনে কুকুরের মাংস উৎসব
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দেশে বিদেশে তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও চীনে শুরু হয়েছে বার্ষিক কুকুরের মাংস উৎসব। দেশটির দক্ষিণাঞ্চল ইউলিনে ১০ দিন ধরে চলবে এ উৎসব। এ সময়ে প্রায় ১০ হাজার কুকুর ও বিড়াল হত্যা করে তার মাংস ভক্ষণ করা হবে। কিন্তু অধিকারকর্মীরা এ উৎসবকে নিষ্ঠুর বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা এ উৎসব বন্ধের জন্য এক কোটি ১০ লাখ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। তবে স্থানীয় সরকার বলেছে, এ উৎসবের সঙ্গে সরকারি কোন সমর্থন নেই। এটা একান্তই প্রাইভেট উৎসব।
এতে বলা হয় চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও অন্য দেশগুলোতে কুকুরের মাংস খাওয়ার রীতি প্রচলিত প্রায় ৫০০ বছর আগে থেকে। সেকানে বেশির ভাগ মানুষ মনে করে থাকেন যে, কুকুরের মাংস খেলে গরমের মাসগুলোতে শান্তিতে থাকা যাবে। কিন্তু ইউলিনে যে উৎসব শুরু হয়েছে তা নতুন। এর বয়স মাত্র কয়েক বছর। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি
ইউলিনের অধিবাসী ও ব্যবসায়ী বলেন, এ উৎসবে পশুগুলোকে হত্যা করা হয় মানবীয় উপায়ে। কিন্তু সমালোচকরা বলেন, পশুগুলোকে হত্যা করা হয় নৃশংস উপায়ে এবং তা করা হয় প্রকাশ্যে। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রহার করে হত্যা করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে জীবিত অবস্থায় রান্না করা হয়। উৎসবকে সামনে রেখে কুকুরগুলোকে ধরে ছোট্ট খাঁচায় আটকে রাখা হয়। অনেক কুকুর অন্য শহর থেকে গাদাগাদি করে লরিতে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় ইউলিন শহরে। তাদেরকে রাখা হয় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে। এতে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। স্টপ ইউলিন ফরএভার নামের গ্রুপ দাবি করছে, কুকুরগুলোকে আনার সময় কয়েকদিন পর্যন্ত খাদ্য ও পানি দেয়া হয় না। কুকুরের মাংস বিক্রি চীনে বেধ। প্রতি বছর সেখানে মানুষের মাংসের চাহিদা মেটাতে প্রায় এক কোটি কুকুর হত্যা করা হয়। স্থানীয় অনেকের কাছে ইউলিনের এই উৎসব ঐতিহ্যের। অনেক রেস্তোরায় পরিবেশন করা হয় কুকুরের মাংসের নানা রকম ডিশ। এর স্বাদ নিতে বহু মানুষ এই শহরে যায়। তবে এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে সমালোচনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া একটি জরিপ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায় ১৬ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে শতকরা ৬৪ ভাগই এ উৎসব স্থায়ীভাবে বন্ধ হোক তা চান। ইউলিনের অধিবাসী সহ শতকর ৫১.৭ ভাগ মানুষ চায় কুকুরের মাংসের বাণিজ্য পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দেয়া হোক। শতকরা ৬৯.৫ ভাগ মানুষ বলেছে, তারা কখনোই কুকুরের মাংস খায় নি। দাতব্য সংস্থা ক্যাপিটাল এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশশের পরিচালক কিন সিয়াওনা বলেছেন, বিশ্ব চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি খারাপ ধারণা পাচ্ছে এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনালের মতো অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো স্থানীয় জবাইখানা থেকে কুকুরগুলোতে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে তারা ২০টি কুকুর উদ্ধার করেছে। এ সংস্থার পিটার লি বলেন, যদি আমরা সেখানে না থাকি তাহলে সব কুকুরকে প্রহার করে হত্যা করা হয় এবং তার মাংস ভক্ষণ করা হয়। এটা হতাশার কথা।