ধীরগতিতে দুর্ভোগ নজিরবিহীন নিরাপত্তায় রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু
আনিসুর রহমান তপন : ঈদ উপলক্ষে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি গতকাল বুধবার শুরু হলেও সকালে ভিড় দেখা যায়নি খুব একটা। তবে অন্যান্যবারের মতো এবারও অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে কমলাপুর স্টেশনে কাউন্টারের সামনে লাইন শুরু হয়েছে আগের রাত থেকেই। সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে চলেছে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত। অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে আগামী ২৬ জুন পর্যন্ত। একজন যাত্রী একসঙ্গে ৪টির বেশি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন না।
সরেজমিন কমলাপুর স্টেশনে দেখা গেছে, টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেই ছিল টিকিট প্রত্যাশীদের স্বাভাবিক ভিড়। তবে ধীরগতিতে টিকিট বিক্রিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রী। যাত্রীদের অভিযোগ গরম আবহাওয়ায় এমনিতেই অস্বস্তি তার ওপর ধীরগতিতে টিকিট বিক্রি হওয়ায় আরও দুর্ভোগে পরেন তারা।
এদিকে, কালোবাজারি ঠেকাতে ভোর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের ২০টি কাউন্টারসহ স্টেশনের আশপাশে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। রেল পুলিশ, আমর্ড পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য।
যাত্রী নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সহায়তার জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে পুলিশ ও রেল নিরাপত্তা বাহিনীর আলাদা আলাদা তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। যে কোনো রেলস্টেশন থেকে টিকিট, টিকিট সংক্রান্ত সমস্যা, ট্রেন কখন ছাড়বে তার তথ্য ০১৭৫০০৭৮৬৯৭ ও ০১৯৯০০৮৮৭২৮ নম্বরে ফোন করে যে কেউ জানতে পারবেন। এ সহায়তা ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে যাত্রীদের জন্য। এছাড়া রয়েছে র্যাবের একটি একটি অস্থায়ী ক্যাম্প।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জিআরপি থানার ওসি আব্দুল মজিদ বলেন, টিকেট কালোবাজারিসহ অনিয়ম ঠেকাতে তার বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। কালোবাজারি সন্দেহে এ পর্যন্ত (সকাল ১১টা পর্যন্ত) ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়াও যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে মঙ্গলবার রাত থেকে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এজন্য স্টেশনের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সিসি টিভি। তার ওপর ঈদের বিশেষ ট্রেনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা থাকবে বলেও জানান ওসি আব্দুল মজিদ।
রেল সূত্র জানায়, ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম চলবে ২২ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত। গতকাল ২২ জুন বিক্রি করা হয়েছে ১ জুলাইয়ের টিকিট, ২৩ জুন বিক্রি হবে ২ জুলাইয়ের, ২৪ জুন বিক্রি হবে ৩ জুলাইয়ের, ২৫ জুন বিক্রি হবে ৪ জুলাইয়ের এবং ২৬ জুন বিক্রি হবে ৫ জুলাইয়ের টিকিট। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত প্রতিদিন টিকিট বিক্রি চলবে। ঈদের আগে পাঁচ দিন ও ঈদের পরের পাঁচ দিন ঈদ স্পেশাল ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে বাড়তি সেবা দেওয়া হবে যাত্রীদের। এ জন্য থাকছে সাত জোড়া স্পেশাল ট্রেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুই জোড়া ট্রেন চলবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে একটা নতুন ট্রেন চালুর চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা-পার্বতীপুর, ঢাকা-খুলনা রুটে এক জোড়া করে ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলবে। বাকি দুই জোড়া ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ রুটে যাতায়াত করবে।
অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রসঙ্গে সম্প্রতি রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক সাংবাদিকদের জানান, এবারও ঈদ উপলক্ষে বিদ্যমান ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হবে। এজন্য সৈয়দপুর ও পার্বতীপুর রেল কারখানায় মেরামত করে ব্যাবহার উপযোগী করা হচ্ছে ১৭০টি বগি। পাশাপাশি ২৫টি অতিরিক্ত ইঞ্জিনও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মুজিবুল হক আরও জানান, সীমিত সম্পদের মধ্যেও সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা শতভাগ প্রস্তুত। পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে অগ্রিম টিকিট বিক্রি। ঈদ উপলক্ষে রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন ২ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনের টার্গেট নেওয়া হয়েছে জানিয়ে রেলপথমন্ত্রী বলেন, সাধারণত প্রতিদিন বিভিন্ন স্টেশন থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়। সেখানে আমরা ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো বাড়তি যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করেছি।
অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রসঙ্গে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, এবার ৬৫ শতাংশ টিকেট উন্মুক্ত বিক্রির জন্য রাখা আছে। আর ২৫ শতাংশ টিকিট যাত্রীরা মোবাইল ও অনলাইনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়াও ভিআইপিদের জন্য ৫ শতাংশ ও রেলের নিজস্ব কর্মচারীদের জন্য আরও ৫ শতাংশ টিকিট সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি