উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রের ঘাটতি সমস্যা নয় : ড. তৌফিক-ই-ইলাহী বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ
বিশ্বজিৎ দত্ত : প্রথমবারের মতো ২ বিলিয়ন ডলারের উপরে বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে বাংলাদেশে । এটি দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই)। দক্ষিণ এশিয়ায় বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণের দিক থেকে প্রথমে রয়েছে ভারত। তবে বৃদ্ধির হারের দিক থেকে ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার ৪৪ শতাংশ অন্যদিকে ভারতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার ২৭ শতাংশ। তবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির হারের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। নেপালে এফডিআই বৃদ্ধির হার ৭৮ শতাংশ। গতকাল বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্পর্কিত জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন-২০১৫- এ তথ্য দেয়া হয়েছে।
বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস। গতকাল ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে। বর্তমানে যেটুকু রাজনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে তা সব দেশেই থাকে। বিশ্বে ঝুঁকিবিহীন বিনিয়োগ বলতে কিছু নেই।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বোর্ড আঙ্কটাডের এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এখানে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ রয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রের ঘাটতি কোনো সমস্যা নয়। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুদক্ষ নেতৃত্বের। যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। দশকে উন্নত করতে এ ধরনের নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি এপ্রসঙ্গে কোরিয়া ও সিংগাপুরের উদাহরণ দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে সবচেয়ে বেশি সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে। যার পরিমাণ ৪ হাজার ৪২০ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। বাংলাদেশে মোট বিনিয়োগ এসেছে ২২৩ কোটি মার্কিন ডলার। পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় বিনিয়োগ কমে গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। পাকিস্তানে ৮০ কোটি ৬৫ লাখ ডলার ও শ্রীলংকায় ৬৮ কোটি ডলার। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পট্রোলিয়াম খাতে। এখানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৭৪ মিলিয়ন ডলার। এরপরে রয়েছে, টেক্সটাইল পোশাক শিল্প সেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৪৩ মিলিয়ন ডলার। এর পরে রয়েছে, ব্যাংকিং ও টেলিকমিউনিকেশন খাত, ব্যাংকিংয়ে বিনিয়োগ হয়েছে, ৩১০ মিলিয়ন ও টেলিকমিউনিকেশনে ২৫৫ মিলিয়ন ডলার।
২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ হয়েছে, ১ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন ডলারের(১ লাখ কোটি ডলারে ১ ট্রিলিয়ন)। বিনিয়োগের দিক থেকে প্রথমে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, পরে যথাক্রমে, হংকং, চীন, আয়ারল্যান্ড, সিংগাপুর, ব্রাজিল, কানাডা ও ইন্ডিয়া। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ কমবে। ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়া, কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ মুনাফা কমে যাওয়া,রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সন্ত্রাসবাদের কারণে নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগের পরিমাণ কমবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে অনুষ্ঠানে অর্থনীতি সমিতির সদস্য জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৭০ সালের দিকে আলজেরিয়া, মিসর ও ইরান উন্নত দেশ হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের দেশেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।