আদালতে শিহাবের স্বীকারোক্তি বড় ভাইয়ের নির্দেশে টুটুলকে হত্যার চেষ্টা
মামুন খান : ইসতিয়াক নামে এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে লালমাটিয়ার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদ রশীদ টুটুলকে হত্যায় অংশগ্রহণ করেন বলে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য শিহাব ওরফে সুমন।
গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবীবের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি প্রদান করে শিহাব।
জবানবন্দিতে শিহাব বলে, তার প্রকৃত নাম সুমন হোসেন পাটোয়ারী। জঙ্গি দলে যোগ দেওয়ার পর তার নাম দেওয়া হয় সাকিব ওরফে সিহাব ওরফে সাইফুল। তার বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি। সে ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের সরাইপাড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় দুই বিষয়ে ফেল করে সুমন। ওই কলেজে যাওয়া আসার পথে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই ব্যক্তি সব সময় তাকে কোরআন-হাদিসের কথা বলত। তার মাধ্যমে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেন। এরপর একে একে আরও পাঁচজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারা তাকে একটি পরিচয়পত্র দেন এবং জিহাদে উদ্বুব্ধ করেন। তাকে ধর্মের কথা বলে মগজ ধোলাই করতে থাকে তারা। এরপর তারা তাকে পরিবার ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নিতে বলেন। এরপর সে বাসে করে ঢাকার টঙ্গীর বর্ণমালা রোডের একটি মেসে ওঠেন।
মেসে থাকাকালীন সময়ে ইশতিয়াক নামে এক বড় ভাইয়ের সাথে তার পরিচয় হয়। ওই ‘বড় ভাইয়ের’ নির্দেশে তারা ওই বাসায় চারজন তিন মাস জিহাদের প্রশিক্ষণ নেন। বড় ভাই ইশতিয়াক সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে জিহাদে অংশ নেন। ওই বড় ভাইয়ের নির্দেশে সেলিম ও শরীফুল আহমেদ রশীদ টুটুলের ছবি দেখিয়ে তাকে বলেন, এই ব্যক্তি আল্লাহ ও ধর্মের বিরুদ্ধে বই ছাপেন। তাকে কতল (খুন) করতে হবে। এরপর অনেক দিন তারা লালমাটিয়ার শুদ্ধস্বরের কার্যালয় পর্যবেক্ষণ (রেকি) করেন।
শিহাব আদালতকে বলেন, ‘বড় ভাইয়ের’ নির্দেশে ৩১ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে শরীফুলসহ তারা চারজন লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে কর্তব্যরত দারোয়ানকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে দুজন ভেতরে ঢুকে টুটুল, লেখক রণদীপম বসু ও ব্লগার আবদুর রহিমকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করেন। টুটুল বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে তিনি টুটুলের হাতে কোপ দেন। এ সময় অভিযান সফল করতে শরীফুল চাপাতি নিয়ে বাইরে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। পরে তারা টুটুল, রণদীপম বসু ও ব্লগার আবদুর রহিমকে কুপিয়ে ও গুলি করে চলে যান।
গত মঙ্গলবার ৫দিনের রিমান্ড চলাকালীন সময়ে শিহাব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করতে সম্মত হওয়ায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ইন্সপেক্টর বাহাউদ্দিন তাকে আদালতে হাজির করেন।
স্বীকারোক্তি প্রদান শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবীব তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম