ইমতিয়াজ বিন মাহতাব
ইফতার পার্টি, ইফতার মাহফিল একটা কালচারে পরিণত হয়েছে। রমজান মাসে ইফাতার পার্টির ধুম পড়ে। ইফতার পার্টিকে রাজনৈতিক স্বার্থেও ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রমও করছে।
মুসলমান সমাজে অন্যকে ইফতার করানোর এই রীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি হাদিস। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং দোজখের আগুন থেকে সে নাজাত পাবে। আর সে ওই রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে। অথচ এতে ওই রোজাদারের সওয়াব মোটেও কমবে না।
এ কথা শুনে সাহাবারা আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে সকলের তো রোজাদারকে ইফতার করাবার সামর্থ্য নেই। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে এক ঢোক দুধ কিংবা একটি খেজুর অথবা একটু পানিও পান করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে উক্ত রূপ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তির সাথে আহার করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজে কাওসারের এমন পানি পান করাবেন, বেহেশতে প্রবেশ পর্যন্ত সে আর পিপাসা অনুভব করবে না।
এ হাদিসে একটি বিষয় লক্ষ করা উচিত। এখানে ইফতার করানোর কথা বলা হয়েছে রোজাদার ব্যক্তিকে। আমরা ইফতার মাহফিলে, ইফতার পার্টিতে যাদের দাওয়াত করি, তাদের কয়জন রোজাদার থাকে? ইফতার করানোর কথা রোজাদার ব্যক্তিকে, অথচ আমরা এ সমস্ত কালচারে দেদারসে বেরোজাদার ব্যক্তিকে শরীক করছি, তাদের ইফতার করাচ্ছি। হাদিসের শেষাংশে তৃপ্তির সাথে ইফতার করানোর প্রতিদান হিসাবে হাউজে কাউসারের পানি প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এটা শুধু মুসলমানদের প্রাপ্য। আমরা ইফতার মাহফিল/ইফতার পার্টির নামে যে ভূরিভোজের আয়োজন করছি, তাতে বিধর্মীদেরও দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছি। যার বিনিময় হাউজে কাউসারের পানি, তা শুধুই মুসলমান রোজাদারের প্রাপ্য।
বিষয়টা বোঝা উচিত, ভাবা উচিত। ইফতার করানো একটি ইবাদত। তারপর সেটা কালচার। আমরা ইবাদতের নিয়মের তোয়াক্কা না করে শুধুই কালচার নিয়ে ব্যস্ত। কোথায় রাসুল সা. এর হাদিস আর কোথায় আমাদের ব্যবহারিক জীবন!
লেখক : ইমাম ও খতীব, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট জামে মসজিদ