আল্লাহর অপার দয়ার নিদর্শন
লাইলাতুল কদর
কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক
মহামান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর। পবিত্র কুরআনে লাইলাতুল কদরকে বরকতময় রজনী বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম। শান্তির আবহ ঘিরে রাখে প্রতিটি বিষয়কে লাইলাতুল কদরে। এ রজনীতে স্থিরীকৃত হয় প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়।
মাগফিরাতের রজনী লাইলাতুল কদর। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ছওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর ইবাদতের মাধ্যমে যাপন করে তার অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আল্লাহতায়ালা এ মাসের শ্রেষ্ঠত্বের আহ্বানে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল করেছেন। নাম সুরা কদর।
ইমাম আবু মুহাম্মদ ইবনে আবি হাতিম র. এ সুরার তাফসির প্রসঙ্গে একটি বিস্ময়কর রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন। হজরত কাআব রা. বলেন, সপ্তম আকাশের শেষ সীমায় জান্নাতের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে সিদরাতুল মুনতাহা যা দুনিয়া ও আখিরাতের দূরত্বের ওপর অবস্থিত। এর উচ্চতা জান্নাতে এবং এর শিকড় ও শাখা-প্রশাখা কুরসির নিচে প্রসারিত। তাতে এত ফেরেশতা অবস্থান করেন, তাদের সংখ্যা নির্ণয় করা আল্লাহপাক ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব নয়। এমনকি চুল পরিমাণও জায়গা নেই যেখানে ফেরেশতা নেই। ওউ বৃক্ষের মধ্যভাগে হজরত জিব্রাইল আ. অবস্থান করেন।
আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে হজরত জিব্রাইল আ.-কে ডাক দিয়ে বলা হয়, ‘হে জিব্রাইল আ. কদরের রাতে সমস্ত ফেরেশতাকে নিয়ে পৃথিবীতে চলে যাও।’ এ ফেরেশতাদের সবারই অন্তর স্নেহ ও দয়ায় ভরপুর। প্রত্যেকে মুমিনের জন্য তাদের মনে অনুগ্রহের প্রেরণা রয়েছে। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই কদরের রাতে এসব ফেরেশতা হজরত জিব্রাইল আ.-এর সঙ্গে নেমে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েন এবং সব জায়গায় সিজদায় পড়ে যান। তারা সব ঈমানদার নারী-পুরুষের জন্য দোয়া করেন। কিন্তু তারা গির্জা, মন্দির, অগ্নিপূজার জায়গা, মূর্তি পূজার জায়গা, আবর্জনা ফেলার জায়গা, নেশাখোরের অবস্থানস্থল, নেশাজাত দ্রব্যাদি রাখার জায়গা, মূর্তি রাখার জায়গা, গান-বাজনার সাজসরঞ্জাম রাখার জায়গা এবং প্র¯্রাব-পায়খানার জায়গায় গমন করেন না। বাকি সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে তারা ইমানদার নারী-পুরুষের জন্য দোয়া করে থাকেন। হজরত জিব্রাইল আ. সব ইমানদারের সঙ্গে করমর্দন করেন। তার করমর্দনের সময় মুমিন ব্যক্তির শরীরের লোমকূপ খাড়া হয়ে যায়, মন নরম হয় এবং অশ্রুধারা নেমে আসে। এসব নিদর্শন দেখা দিলে বুঝতে হবে তার হাত হজরত জিব্রাইল আ.-এর হাতের মধ্যে রয়েছে।
রমজানের শেষ দশ দিনে ‘লাইলাতুল কদর’ তালাশ করা মুস্তাহাব। তবে তা বেজোড় রজনীতে হওয়া প্রায় নিশ্চিত। হজরত রাসুল সা. বলেন, ‘তোমরা লাইলাতুল কদর তালাশ করো রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রজনীগুলোতে।’ তিনি বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ সে হিসাবে রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে ‘লাইলাতুল কদর’ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। লাইলাতুল কদর পাওয়ার উত্তম পদ্ধতি হলো রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফে কাটানো এবং শেষ দশকের প্রতিটি রাত ইবাদতের মাধ্যমে যাপন করা। লাইলাতুল কদরে আয়েশা সিদ্দিকা রা. কর্তৃক বর্ণিত দোয়াথ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ করো। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করো।
শধষধসরফবধ@ুধযড়ড়.পড়স