রোজা মুমিনের পরম বন্ধু
হা সত্যি বলছি। রোজা মুমিনের বন্ধু। পরম বন্ধু। আপনি হয়তো ভাবছেন, এটা আবার কি করে হয়? রোজা আবার বন্ধু হয় কিভাবে? তাও আবার পরম বন্ধু। আমরা তো দেখি, রোজা মানুষকে কষ্ট দেয়। সারাদিন না খাইয়ে রাখে। ক্ষুধার সে কি যন্ত্রণা! বাড়তি অনেক বিধি নিষেধ তো আছেই। বিশেষ করে আমরা যারা নফসে আম্মারার গোলাম। আমাদের তো জান বের হয় হয় অবস্থা। একটি মাস, যেন শিকলে বাঁধা জিন্দেগি। এরপরও আপনি রোজাকে বন্ধু বলবেন?
আমি বলব, জনাব! আপনি হয়তো বিষয়টির গভীরতা তলিয়ে দেখেননি। আপনার হয়তো জানা নেই, বন্ধুর একটি তারিফ এমনও আছে; ‘বন্ধু বলে তাকে, কষ্টের খোলসে যে তোমাকে রাখতে চায় সুখে।’ রমজানও ঠিক এমনই। বাহ্যিক দৃষ্টিতে যদিও রোজার মাঝে কষ্ট পরিলক্ষিত হয় কিন্তু এর অভ্যন্তরে শুধু কল্যাণ আর কল্যাণ। রোজার বাহ্যিক রূপ কাটাতারে ঘেরা। আর ভেতরে রয়েছে অমৃতের স্বাদ। বন্ধুত্বের এমন কোনো দিক আছে যা রোজার মধ্যে নেই। শুধু স্বার্থপরতা ছাড়া। এ দিকে লক্ষ করলে তো বলতে হয়, রোজা দুনিয়াবি বন্ধুর চেয়ে একধাপ এগিয়ে। রোজা মুমিনের নিঃস্বার্থ বন্ধু। যার কাজই হচ্ছে মুমিনের উপকার করা। চাওয়া পাওয়ার কোনো অধ্যায় এর মাঝে নেই।
দুনিয়ার জিন্দেগি মূলত পরকালের সফর। যার শুরু জন্ম দ্বারা। এর শেষ হয় মৃত্যুর মাধ্যমে। সফরজীবনের সফলতা বা ব্যর্থতার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে হাশরের মাঠে। মাঝখানে রয়েছে কবর জগত। পরকালীন সফরের প্রতিটি ধাপে ধাপেই রোজা মুমিনের উপকারে আসে। হজরত আবু হুরায়রা রা. রাসুল সা. থেকে বর্ণনা করেন, রোজা মুমিনের ঢাল স্বরূপ। বুখারি : ১৮৫৬
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস কাজি ইয়াজ উক্ত হাদিসের দুটি ব্যখ্যা বর্ণনা করেন। এক. এ হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুমিন ব্যক্তি রোজার সাহায্যে নিজকে গোনাহ থেকে হেফাজত করবে। যোদ্ধা যেভাবে ঢাল দ্বারা আত্মরক্ষা করে। এই ব্যখ্যায় বর্ণিত কল্যাণটি দুনিয়ায় থাকাকালীন সময়ের সাথে সম্পৃক্ত। ২য় ব্যখ্যায় বলা হয়েছে, এ হাদিসের উদ্দেশ্য হচ্ছে, একজন যোদ্ধা যেভাবে ঢালের সাহায্যে শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করে, তেমনিভাবে মুমিন বান্দা রোজার মাধ্যমে নিজকে জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করবে। বর্ণিত এ কল্যাণটি পরকালীন সময়ের সাথে সম্পৃক্ত। অন্য এক হাদিসে আছে, মুমিন বান্দাকে যখন কবরে রাখা হয়, তখন তার বিভিন্ন নেক আমল; যেমন : নামাজ রোজা কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি তার কবরে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করে। সফরের প্রতিটি ঘাটিতে রোজা এভাবেই মুমিন বান্দার সঙ্গ দিয়ে থাকে। তাছাড়া মুমিন বান্দা যখন পাপের ভারে নুইয়ে পরে, রোজা তখন তাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে। হজরত আবু হুরায়রা রা. নবি সা. থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে এবং রমজানের রাত্র জাগরণ করবে; আল্লাহ তার অতীত জীবনের সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিরমিজি শরিফ : ১৪৭
জনাব! এবার আপনিই বলুন, সফর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে আপনার সঙ্গ দেবে, সে আপনার বন্ধু নইতো কী?
আমরা সচেষ্ট হই, যেন রোজার এ স্বার্থহীন কল্যাণ কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারি। যেন হাশরের মাঠে সফরজীবনের চূড়ান্ত ফলাফল সফলতাই আসে।
শিক্ষক : জামিয়াতুস সালাম মদিনাবাগ মাদরাসা ঢাকা