রোজার পরিশুদ্ধিতে সাদাকাতুল ফিতর
মুফতি মাহফুজ তানিম
…ফিতরার নিসাব জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা…
পবিত্র রমজান মাসে বিশেষ কিছু আমল আমাদের জন্য রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাদকাতুল ফিতর একটি অন্যতম ইবাদত। ঈদের দিন গরিবদের খাবারের জন্য শরিয়তপ্রদত্ত একটি ব্যবস্থাপত্র। জাকাতের মতো এটিও দরিদ্র মানুষের ওপর মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত আমলি সহযোগিতা।
সাদাকাতুল ফিতরের বিধান: সাদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। হজরত ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসুল সা. সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটা আবশ্যক। বুখারি : ১৫১২
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন রাসুলুল্লাহ সা. সাদাকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন অনর্থক এবং অশালীনতার ত্রুটি থেকে রোজাকে মুক্ত করার জন্য এবং দরিদ্র মানুষের খাবারের সংস্থান করার জন্য। যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে তা আদায় করবে, সেটা হবে মকবুল দান আর যে ঈদের নামাজের পরে আদায় করবে সেটা হবে সাধারণ দানসমূহের মধ্য হতে একটি দান। সুনানে আবু দাউদ : ১৬০৯, মুসদাদরেকে হাকেম : ১৪৮৮
কার ওপর ওয়াজিব : ফিতরার নিসাব জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা ব্যবহারের অতিরিক্ত জিনিসপত্র ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় থাকলে তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হবে। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। ফাতহুল কাদির : ২/২৮১
অতএব কেউ যদি ঈদের আগের দিনও এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাকেও তা আদায় করতে হবে। সামর্থ্যবান না হলে সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে না। রাসুল সা. বলেছেন, সর্বোত্তম সদকা সেটাই, যেটা সামর্থ্যবান কেউ আদায় করে। বুখারি : ১৩৬০ অতএব পুরুষ, নারী সবার ওপরই এই সদকা ওয়াজিব।
কার পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব : নিজের পক্ষ থেকে এবং নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান বা অবিবাহিত মেয়ের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব। সন্তানের নামে সম্পদ থাকলে সেখান থেকে আদায় করা যাবে। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব নয়। কোনো এতিম শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে থাকলে তার পক্ষ থেকেও আদায় করতে হবে। বাদায়েউস সানায়ে : ২/৭০
কখন ওয়াজিব হয় : সাদাকাতুল ফিতর ঈদুল ফিতরের ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াজিব হয়। কাজেই সেদিন ভোরের আগে যে জন্ম নিয়েছে, বা এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে, তাকেও এই সদকা আদায় করতে হবে। কেউ যদি সেদিন ভোরের আগে মারা যায়, তার ওপর সদকা ওয়াজিব হবে না। আবার ভোর হবার পর কেউ জন্ম নিলে তার পক্ষ থেকেও সদকা আদায় করা ওয়াজিব হবে না।
কখন আদায় করতে হয় : ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। তবে যাকাতের ন্যায় সেই সময়ের আগেও আদায় করা যেতে পারে। আবার কোনো কারণে সময় মতো আদায় করতে না পারলে পরেও আদায় করা যাবে। কেউ আদায় না করে মৃত্যুবরণ করলে তার পক্ষ থেকে তার উত্তরাধিকারী আদায় করে দিলেও আদায় হয়ে যাবে।
পরিমাণ : গম, গমের আটা, জব, জবের আটা এবং খেজুর ও কিশমিশ দ্বারা ফিতরা আদায় করা যায়। গম বা গমের আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে গম অর্ধ সা’ (১ কেজি ৬৬০ গ্রাম) এবং জব বা জবের আটা কিংবা খেজুর দ্বারা আদায় করলে এক সা’ (৩ কেজি ৩২০ গ্রাম) দিতে হবে। রুটি, চাল বা অন্য খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দিতে হলে মূল্য হিসেবে দিতে হবে। কিশমিশ দিয়ে ফিতরা আদায় করলেও এক সা’ দিতে হবে। দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম। অন্যান্য সময় মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা উত্তম।
লেখক : শিক্ষক, জামেয়া হোসাইনিয়া দারুল উলুম, মিরপুর।