ফাতেমা নাজনীন
ইসলামের কিছু বিধান সবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। হজ ও যাকাত এদের অন্যতম। পথ খরচের অর্থ আপনার কাছে অতিরিক্ত থাকলেই আপনার উপর হজ ফরজ। ঠিক একই রকম জাকাতের বিধান। নেসাব পরিমাণ মাল অর্জনের পর সেটা এক বছর আপনার মালিকানায় থাকলেই পরবর্তি বছর তার জাকাত দিতে হবে। তবে নেসাব পরিমাণ সম্পদ ছাড়াও জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। আসুন জেনে নেই শর্তগুলো।
১. ব্যক্তিকে মুসলমান হতে হবে। ২. সুস্থ ও জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। পাগলদের জন্য জাকাত ফরজ নয়। ৩. প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। নাবালেগের ওপর জাকাত ফরজ নয়। ৪. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে। ৫. নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকা। যদি পূর্ণ এক বছর না হয় তাহলে জাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবে না।
হুজুর সা. ইরশাদ করেছেন কোন সম্পদের জাকাত বছর অতিবাহিত হওয়া ব্যতিত ওয়াজিব হবে না। [হিদায়া ১/১৮৫ ৬. নিসাবের মালিক ব্যক্তি ঋণগ্রস্থ না হওয়া।]
নিসাব কী? নিসাব ইসলামি পরিভাষা। এর অর্থ হলো, শরিয়ত নির্ধারিত নিন্মতম সীমা বা পরিমাণ। নিসাবের পরিমাণ হলো, নিত্য দিনের প্রয়োজন পূরণ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদ দেয়ার পর সাড়ে বায়ান্ন তোলা পরিমাণ (৬১২.৩৬ গ্রাম) রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম) পরিমাণ স্বর্ণ থাকা অথবা এর সমমূল্যের ব্যবসার মালের মালিক হওয়া। শরিয়তে এ পরিমাণ সম্পদ থাকাকে জাকাতের নিসাব বলে। এখন কারো কাছে এ পরিমাণ সোনা-রূপা বা অন্য কোনো সম্পদ থাকলে তাকে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। আর মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে গরিবদের জন্য যা বেশি লাভজনক হয় তার মূল্যই ধরতে হবে।
নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কী? নিসাব হওয়ার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কোনগুলো। ফিকহবিদরা এর একটি হিসাব নির্ধারণ করেছে। তারা বলেছেন, মৌলিক প্রয়াজনের তথা জীবন ধারণের জন্য যে সব বস্তু ও উপকরণ আবশ্যক। যেমন, বাসস্থান, প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড়, ঘরোয়া আসবাবপত্র, আরোহনের যানবাহন, গাড়ি-মটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ফ্রিজ, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। এসবের ক্ষেত্রে জাকাত আসবে না। একইভাবে খাদ্যদ্রব্যের জন্য জাকাত আসে না। বাড়ি ঘর সাজানোর জন্য হীরা-জহরত, মণি-মাণিক্য ইত্যাদি বস্তু যতই মূল্যবান হোক না কেন, এগুলোর জাকাত দিতে হবে না। তবে এগুলো যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে রাখা হয় তাহলে জাকাত দিতে হবে।
এমনিভাবে আলেমদের কিতাবসমূহ বা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য ব্যবহৃত হয় এমন জিনিস এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের পেশা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়। এসবগুলোই মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভূক্ত। [ফতওয়ায়ে আলমগীরি : ৪/৭, ইলমূল ফিক্বহ: ৪/১৪]