উ.কোরিয়াকে গোপনে পরমাণু সরঞ্জাম দিয়ে ঘোর বিপাকে পাকিস্তান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : উত্তর কোরিয়াকে গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম বিক্রি করছে পাকিস্তান। সেই সব সরঞ্জাম পাকিস্তান কিনছে চিনের কাছ থেকে। প্রমাণ জোগাড় করে এনএসজি সদস্যদের জানিয়েছে আমেরিকা। চিনও বিষয়টি জানে বলে দাবি আমেরিকার। এনএসজিতে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির দাবি যাতে প্রশ্নের মুখে না পড়ে, তার জন্যই নাকি সব জেনেও বিষয়টি চেপে যেতে চেয়েছিল বেজিং। আনন্দবাজার
ভারতকে এনএসজি-র সদস্য করার জন্য আমেরিকা সক্রিয় হতেই পাল্টা চাপের কৌশলে চিন। পাকিস্তানকেও এনএসজি সদস্যপদ দিতে হবে বলে দাবি তাদের। এনপিটি সই না করা সত্ত্বেও ভারত যদি এনপিটিতে ঢোকার সুযোগ পায়, তা হলে পাকিস্তানকেও সে সুযোগ দিতে হবে বলে বেজিং প্রকাশ্যেই মন্তব্য করেছে। আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা অবশ্য পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির বৈধতার উপর খুব একটা আস্থাশীল নয়। ভারত পরমাণু কর্মসূচির নিরাপত্তা এবং পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধে যতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, পাকিস্তানকে মোটেই ততটা দায়িত্বশীল বলে মনে করে না এই সব দেশ। কিন্তু চিন দাবি করছিল, পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচিও যথেষ্ট দায়িত্বশীল এবং পরমাণু নিরাপত্তার প্রশ্নে ইসলামাবাদের রেকর্ড খুব ভাল। চিনের সেই দাবি নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দাদের পেশ করা রিপোর্টে। গোটা বিশ্বে পরমাণু বাণিজ্যের উপর নজর রাখে যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, তারাই প্রথম পাকিস্তানের সহ্গে উত্তর কোরিয়ার এই অবৈধ পরমাণু বাণিজ্যের হদিশ পায়। চিনের সংস্থা ‘বেজিং সানটেক টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড’-এর তৈরি বেশ কিছু পরমাণু সরঞ্জাম উত্তর কোরিয়ার কাছে পাকিস্তান বিক্রি করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। ‘মোনেল’ এবং ‘ইনকোনেল’ নামে দু’টি সঙ্কর ধাতু ওই চিনা সংস্থার কাছ থেকে কিনে উত্তর কোরিয়াকে বিক্রি করেছে পাকিস্তান। ওই দুই সঙ্কর ধাতু প্রচ- তাপ সহ্য করতে পারে এবং ওই ধাতুগুলির সহজে ক্ষয় হয় না।
পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ওই ধাতু ব্যবহৃত হয়। উত্তর কোরিয়াকে আর কী বিক্রি করেছে পাকিস্তান? মার্কিন গোয়েন্দারা যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন, তাতে দেখা গিয়েছে, চিনা সংস্থার কাছ থেকে ভ্যাকুয়াম ইনডাকশন মেল্টিং ফার্নেস উত্তর কোরিয়াকে পাকিস্তান বিক্রি করেছে। পরমাণু বোমা তৈরির মূল উপকরণ ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম-এর শুদ্ধিকরণের জন্য এই ফার্নেস ব্যবহার করা হয়।
উত্তর কোরিয়ার উপর রাষ্ট্রপুঞ্জের অনেক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচিকেও আন্তর্জাতিক মহল অবৈধ বলে অনেক আগেই ঘোষণা করেছে। তাই কোনও পরমাণু শক্তিধর দেশই উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু কর্মসূচির জন্য সরঞ্জাম দেয় না। চিনও দেয় না। তাই চিনা সংস্থার তৈরি ওই সব সরঞ্জাম যে পাকিস্তান হয়েও উত্তর কোরিয়ায় পৌঁছেছে, সে নিয়ে অন্তর্জাতিক মহলে সংশয় নই। ২০১৩ থেকে ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ইরানে নিযুক্ত দুই উত্তর কোরীয় রাষ্ট্রদূত বার বার পাকিস্তান যাতায়াত করেছেন বলেও মার্কিন গোয়েন্দারা জানতে পারেন। পাকিস্তানের কাছ থেকে পরমাণু সরঞ্জাম কেনার গোপন চুক্তি করতেই তাঁদের বার বার পাক সফর বলে মনে করা হচ্ছিল। পরে পাকিস্তানের কাছ থেকে সে সম্পর্কে আমেরিকা তথ্য চাওয়ায় ইসলামাবাদ উত্তর কোয়ীয় কূটনীতিকদের পাকিস্তান সফরের কথা প্রথমে অস্বীকার করে। আমেরিকা প্রমাণ দেখানোর পর সে কথা পাকিস্তান স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
পাকিস্তান গোপনে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু সরঞ্জাম দিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা তো ভেঙেছেই। এনএসজি সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও পরমাণু সরঞ্জামের গোপন কেনাবেচা চালিয়ে পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ নীতির বিপক্ষে কাজ করেছে। এই তথ্য আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলির হাতে আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইতে পাকিস্তানের সরকার লড়াইয়ের প্রতিশ্র“তি দেওয়ায়, বিষয়টি নিয়ে তেমন হইচই করা হয়নি।
এখন পাকিস্তান এনএসজি সদস্যপদ পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত তৎপর হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান এবং চিন গত কয়েকদিন ধরে দাবি করছে, পরমাণু নিরপত্তার প্রশ্নে পাকিস্তানের রেকর্ড খুব ভাল। পাক কূটনীতিক সরতাজ আজিজ বলেছেন, ভারতের থেকে পাকিস্তানের পরমাণু নিরাপত্তা রেকর্ড অনেক ভাল। চিনা বিদেশ মন্ত্রকও সেই মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ নীতি মেনে না চলার যে অভিযোগ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উঠেছিল, তার জন্য পাক পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খান দায়ী। পাকিস্তানের সরকার দায়ী নয়। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের গোপন এবং অবৈধ পরমাণু বাণিজ্যের তথ্য আর চেপে রাখতে চাইছে না পশ্চিমি দেশগুলি। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের এই ভয়ঙ্কর পরমাণু বাণিজ্যের কথা এনএসজি সদস্যদের জানানো হয়েছে বলেও ওয়াশিংটন সূত্রের খবর।