
সংসদ সদস্যদের ধন, জমি ও সোনা বৃদ্ধি শতগুণ
বিশ্বজিৎ দত্ত : ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি রূপকল্প -২০২১ বলা হয়েছিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আয়ের হিসাব প্রকাশ করা হবে। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার আয়ের হিসাব প্রকাশ করলেও অন্যরা তা প্রকাশ করেননি। সম্প্রতি ‘দ্য রিয়েল পলিটিকস অব বাংলাদেশ: দি ইনসাইড স্টোরি অব লোকাল পাওয়ার ব্রোকারস’ নামের একটি গবেষণামূলক পুস্তিকায় সংসদ সদস্যদের আয়ের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। পুস্তিকাটি প্রকাশ করে সুইজারল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস ও সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের (এসডিসি) যৌথভাবে। সেখানে দেখানো হয়েছে ৬ বছরের কম সময়ের ব্যবধানে সংসদ সদস্যদের (এমপি) আয় বেড়েছে ৩২৪ শতাংশ। নির্বাচনের আগে একজন এমপির বার্ষিক গড় আয় ছিল ২৩ লাখ টাকা। বর্তমানে এমপিদের বার্ষিক গড় আয় ১ কোটি টাকা, যা একজন সাধারণ মানুষের আয়ের প্রায় শতগুণ। সংসদ নির্বাচনের আগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জমা দেয়া আয় বিবরণীর ভিত্তিতে এ পুস্তিকাটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান গড় আয় ১ লাখ ৬ হাজার টাকা ।
পুস্তিকাটিতে দেখানো হয়, ২০০৮ সালে নির্বাচিত এমপিদের মাথাপিছু বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে অর্থাৎ ২০১৩ সালের শেষে এ আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা। অর্থাৎ ছয় বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে সংসদ সদস্যদের আয় বেড়েছে ৩২৪ শতাংশ। তবে ২০০৮ ও ২০১৩ এ দুই বছরই বার্ষিক আয়ের পরিমাণ শূন্য দেখিয়েছেন ২৩ জন এমপি। পর্যালোচনায় এদের আয় শূন্য ধরেই পুস্তিকাটি তৈরি করা হয়েছে। তবে যেসব এমপি পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন তাদের আয় বেড়েছে ৩৫৫ শতাংশ। ২০১৩ সালের শেষে পুনর্র্নির্বাচিত এমপিদের গড় বার্ষিক আয় ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে নবনির্বাচিত এমপিদের গড় বার্ষিক আয় ৯২ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে পুনঃ ও নবনির্বাচিত উভয় ভাগেরই গড় আয়ের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত এমপিদের আয় বেড়েছে ২৯২ শতাংশ।
অন্যান্য আয়ের ক্ষেত্রে এমপিদের জমি বেড়েছে, ১০ শতাংশ। ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে এমপিদের জমি ছিল, গড়ে ৭ দশমিক ৫ একর। ৬ বছর পর তাদের জমি হয়েছে গড়ে ১ একর। স্বর্ণ ছিল ২০০৮ সালে ৩৭ ভরি। ৬ বছর পর তাদের স্বর্ণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে গড়ে ৪৪ ভরি। কোনো কোনো এমপির ১১৪৪ ভরি স্বর্ণও রয়েছে। ২০০৮ সালে এমপিদের আর্থিক সম্পদ ( ব্যাংক ব্যালেন্স, শেয়ার ইত্যাদি) ছিল গড়ে ৮৬ মিলিয়ন টাকা( ১০ লক্ষে এক মিলিয়ন) ৬ বছর পর এমপিদের সম্পদ হয়েছে ২২৫ মিলিয়ন টাকার। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য, আমিনুর রহমান বলেন, এমপিদের নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া আয় বিবরণি নিয়ে রাজস্ব বোর্ড একসময় কাজ শুরু করেছিল। পরবর্তী সময়ে তা আর অগ্রসর হয়নি। তবে সাবেক তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের সময় ৭০৬ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। যারা আয় অনুযায়ী ট্যাক্স দিচ্ছেন না।
