ড. ইফতেখারুজ্জামান সেবাখাতে অনিয়ম-দুর্নীতির বড় অংশজুড়ে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব
নাসিমুজ্জামান সুমন : স্বতন্ত্র আর জনমুখী সেবার ব্রত নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘পাবলিক সার্ভিস ডে’। দিবসটির প্রধান লক্ষ্য জনগণকে উন্নত আর আন্তরিক সেবা প্রদানে সিভিল সার্ভিস কর্মীদের উৎসাহিত করা।
শুধুমাত্র বিশেষ দিবসে নয়, বাংলাদেশে প্রত্যেক কাজের ক্ষেত্রে সরকারি দফতর থাকলেও জনগণ বাস্তবে পাবলিক সার্ভিস বা জনসেবা কতোটা পান? বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমি মনে করি সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু ক্ষেত্রে সেবার গুণগতমান উন্নত হয়েছে এবং আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। কোন কোন সেবাখাতে ডিজিটালাইজেশান বা ইনফরমেশন টেকনোলজির সূচনা হয়েছে।
সরকার ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল নামে একটি নীতি প্রণয়ন করেছিলেন যে নীতির বাস্তবায়ন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। যার প্রভাব জনসেবাখাতে লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিস খাত যেহেতু আর্থÑসামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষিতের উর্ধ্বে নয়, সে কারণে রাজনৈতিক প্রভাবসহ ক্ষমতাসীন দলের একাংশের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে সেবা খাতগুলো ব্যবহৃত হয়।’
এছাড়াও অভিযোগ উঠে, যেমন পরিবহন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জনগণের কাক্সিক্ষত সেবা না পাওয়াসহ কর্মকর্তাদের ঘুষ খাওয়ার বিষয়টি এখন একটি সংস্কৃতিতে দাঁড়িয়ে গেছে। এরকম কেন হচ্ছে?
জবাবে তিনি বলেন, ‘পাবলিক সার্ভিস খাতে এ ধরনের অভিযোগের কারণ হচ্ছে জন-নিরাপত্তা বা আইন রক্ষাকারী দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই আইনের ভক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। একদিকে, রাজনৈতিক প্রভাবে বিষয়তো আছেই, অন্যদিকে জনপ্রতিনিধিরা এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুনাফা অর্জনের উপায় হিসেবে দেখেন। তারা তখন এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করার সুযোগ বা সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। এর প্রভাবে জনপ্রতিনিধি এবং কর্মকর্তাদের যোগসূত্রতার কারণে একদিকে যেমন সেবার মান কমে যায় তেমনি কর্মকর্তাদের একাংশ অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে।’
যথাযথ জনসেবা পেতে জনগণের বিকল্প কোনো পথ আছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে জনগণের বিকল্প পথ তৈরি হয়েছে। যেমন, ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন হয়। যদিও সে আইন এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত পর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু এই আইনটি সেবাখাতের বিরাট সম্ভাবনা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন করে মানুষ তাদের অধিকারগুলো পাচ্ছেনও। এটা কিন্তু একটি দৃষ্টান্তও। বিশেষ করে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো খুবই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছে। যার মাধ্যমে জনগণ যখন সেবা পায়না তখন চ্যালেঞ্জ করতে পারে। যার ফলে এই আইনের মাধ্যমে মানুষ তার অধিকার পাচ্ছে।
এছাড়া পাশাপশি আরেকটি আইন প্রণয়ন হলেও তা বহুল প্রচলিত নয়। সেটি হচ্ছে তথ্য প্রকাশকারী সুরক্ষা আইন। এই আইনটি তাদের জন্য যারা ভালো সেবা দিতে চান, নীতি নৈতিকতার সাথে কাজ করতে চান, কিন্তু সাহস করেন না। তাদের সুরক্ষার জন্য এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এই আইনগুলোর ব্যবহার আরও ব্যাপকভাবে শুরু হলে সেবাখাতের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে। তবে, বিভিন্ন খাতের অনিয়মের কারণ হিসেবে একটি বিশেষ অংশজুড়ে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব। যেমন, নিয়োগ, পদন্নোতি, বদলি প্রভৃতি ক্ষেত্রে যদি রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করা যায় তবে জনগণের সেবার মান উন্নত হবে।’ সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ