বেশি সেলফিতে অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার চান্স বাড়ে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এক সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে যে সেলফি তোলার সময় হাই এনার্জি ভিজিবল লাইটের প্রভাবে ত্বকের ডিএনএ ড্যামেজ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক অসুখের সম্ভাবনা প্রবল। হতে পারে মনের সমস্যাও। সাবধান করলেন ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. সন্দীপন ধর ও মনোবিদ ডা. দেবাশিস রায়। আনন্দবাজার
চলন্ত ট্রেনের সামনে সেলফি তুলতে গিয়ে আচমকা প্রাণহানি অথবা পিলারে দাঁড়িয়ে তাজমহলের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে গুরুতর আহত জাপানের সত্তরোর্ধ পর্যটক, অথবা বিদেশে শিল্প আলোচনায় গিয়ে রাজনীতিকের সেলফি তুলে পোস্ট করার মতো ঘটনা নিয়ে অনেকেই সরব হন। একই সঙ্গে তারাও সবান্ধবে বা সপরিবারে সেলফি তুলে সোস্যাল সাইটে পোস্ট করতে পিছপা হন না। আসলে সেলফি প্রিয় মানুষরা নিজেদের জাহির করতেই অনবরত সিনেমা হল থেকে পাহাড়ের চূড়ায় বা সেলিব্রিটির সঙ্গে এমনকি মানুষের শেষযাত্রার সময়ও সেলফি তুলে পোস্ট করেন। শুধু টিন এজাররাই নয়, সেলফি জ্বরে কাবু আট থেকে আশি অজস্র মানুষ। এক গবেষণায় জানা গেছে যে, মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরায় যে নীল আলো অর্থাৎ হাই এনার্জি ভিজিবিল লাইট (ঐঊঠ) থাকে তা আমাদের ত্বকসহ শরীরের উপর নানান ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। জার্নাল অব আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলজিতে সাম্প্রতিক এই বিষয়ে এক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। জানা গেছে যে, ব্লু ব্যান্ডের হাই এনার্জি ভিজিবিল লাইট (ঐঊঠ) ত্বক ও চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে। এই নীল আলো রিঅ্যাকটিভ অক্সিজেন স্পেসিস (জঙঝ) ত্বকের ডিএনএ ড্যামেজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ফলস্বরূপ শুরুতে কম বয়সে ত্বক বুড়িয়ে যেতে শুরু করে। আর এর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি আরও মারাত্মক। ডিএনএ ড্যামেজ থেকে পরবর্তীকালে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সাধারণ মানুষ ইদানিং সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি সম্পর্কে সচেতন হলেও হাই এনার্জি ভিজিবিল লাইট সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নন। অথচ মোবাইল ফোন ক্যামেরা থেকে এই আলো নিসৃত হয়ে মুখ ও গলার ত্বকের ক্ষতি করে চলেছে। অনেকে অবশ্য মনে করেন সানস্ক্রিন লাগালেই নাকি স্কিন ড্যামেজের হাত এড়ানো সম্ভব। এই ধারণা ঠিক নয়। হাই এনার্জি ভিজিবিল লাইট প্রোটেক্টিং সিরামের সাহায্যে কিছুটা প্রতিরোধ করা যায়। সবথেকে বড় কথা সেলফি তোলা হয় ছয় ইঞ্চি বড়জোর এক ফুট দূর থেকে। সে জায়গায় ক্যামেরায় ছবি তুলতে গেলে ন্যূনতম তিন ফুট দূরে ক্যামেরা থাকে। তাই সেলফির বিপদ অনেক বেশি। সারাদিন সেলফি তুলতে গিয়ে সেলফিস না হয়ে কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বলা ও গল্প করা শরীর মন দুই এর জন্যেই ভালো।
দিনের মধ্যে অজস্রবার সেলফি তোলা শুধু যে শরীরের ক্ষতি করে তাই নয়, মানসিকভাবেও অসুস্থ করে তোলে। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন-এর বিশেষজ্ঞদের মতে সারাদিন ধরে সেলফি তোলা পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারের লক্ষণ। প্রত্যেক মানুষেরই নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো প্রয়োজন। আত্মসমীক্ষা করলে তবেই জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। কিন্তু ইদানিং মোবাইল ফোনের দাপটে অনেক মানুষই নিজের জন্যে তো নয়ই এমনকী বাবা, মা, ভাই, বোন, সন্তান বা স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে বসে কথা বলার জন্যেও ন্যূনতম সময় বার করতে পারে না। সেলফি তুলতে গিয়ে অনেকের এমন অবস্থা হয় যে, কাজকর্ম, খাওয়া, ঘুমসহ নিজের রোজকার স্বাভাবিক জীবনযাপন পর্যন্ত ব্যাহত হয়। সেলফ কাউন্সেলিং এ কাজ না হলে প্রফেশনাল মেন্টাল হেলথ প্রফেশনালের সাহায্য নিয়ে এই ব্যাপারটা থেকে অবিলম্বে বেরিয়ে আসা উচিত। না হলে অতিরিক্ত সেলফিমোহ সব কিছু উলটপালট করে দিতে পারে। অনেকে আবার সেলিব্রিটি দেখলেই ঝাঁপিয়ে পরে সেলফি তোলার চেষ্টা করেন। এটাও কিন্তু এক হীনমন্যতার প্রকাশ। যাদের সেলফ রেসপেক্ট এর অভাব, তারাই এই ধরনের লোক দেখানো আচরণ করে। অনেকে আবার অন্যদের অনুসরণ করতে গিয়ে হাস্যকরভাবে লাগাতার সেলফি তুলতে শুরু করে। তবে সেলফি তোলা মানেই সব খারাপ নয়, সেলফি তুলুন পোস্টও করুন মাত্রা রেখে।
১) সেলফিতে স্বচ্ছ্বন্দ নই মোটেই
মেঘলা দাসগুপ্ত, (ক্লাস ১১, ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুল) অভিনেতা
আমার বন্ধুরা সময় পেলেই সেলফি তোলে, আমি মাঝে মধ্যে এক-আধবার। একই মুখ, বিভিন্ন দিক থেকে নানান পোজে ছবি তুলে কি যে পায় আমি বুঝি না। মনে হয় নিজেকে যারা মাত্রাতিরিক্ত ভালবাসে তারাই বোধহয় এতটা সেলফিপ্রবণ। কোনো গ্যাদারিং-এ গেলে সেলফি তোলার ধুম পড়ে যায়। একবার মনে হয় নিজেকে নানাভাবে দেখলে বোধহয় খুব মজা পায়। হতে পারে এটা একটা খেলা। এগুলো পড়লে আমার বন্ধুরা কিন্তু রেগে যেতে পারে। আর সত্যি কথাটা হলো আমি খুব একটা ভালো সেলফি তুলতে পারি না। সেলফি তোলার জন্যে স্কিন খারাপ হয়ে যায় শুনলে হয়তো এই হিড়িক কিছুটা কমবে।
২) সেলফি তুলে পোস্ট করা আমার না পছন্দ
ঋদ্ধি সেন, অভিনেতা
আমি ছবি তুলতে খুব ভালবাসি, সেলফি নয়। বিভিন্ন নানান ফ্রেম এ বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি তুলতে আমার ভালো লাগে। কিন্তু দিনরাত সময় পেলেই সেলফি তোলা ব্যাপারটাই আমার কেমন যেন বোকা বোকা লাগে। মোবাইলের টেকনোলজি আমাদের খুব সুবিধে করে দিয়েছে। কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার না করতে পারলে নিজেদেরই ক্ষতি। সেলফি তুলতে গিয়ে কত দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়। নিজেরা সতর্ক না হলে কিন্তু এর সমস্যার সুরাহা হবে না। ফ্রন্ট ক্যামেরা, সেলফি এই ব্যাপারটাই আমার খুব বোকা বোকা লাগে। তবে হ্যাঁ আমার অভিনয় ভালবেসে যখন কেউ সেলফি তুলতে চায় খুব ভালো লাগে। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ