
আগ্নেয়গিরি ছিল, প্রাণের বিবর্তনও হয়েছিল মঙ্গলে! ইঙ্গিত নাসার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জলের স্রোতের প্রমাণ মিলেছিল। এবার বোঝা গেল, এক সময় বিশাল বিশাল জীবন্ত আগ্নেয়গিরিও ছিল মঙ্গলে! তারা নিয়মিতভাবে লাভা উদগীরণে যেত! কোনো এক অনাদি অতীতে হয়তো প্রাণ ছিল মঙ্গলে। আর সেই ‘প্রাণ’ সৃষ্টির পরেই হারিয়ে যায়নি। লক্ষ-কোটি বছর ধরে তা হয়তো টিঁকে ছিল। আর অত দিন ধরে টিঁকে থাকার জন্য হয়তো সেই প্রাণের বিবর্তনও হয়েছিল ‘লাল গ্রহে’। হয়েছিল অভিযোজন। আর বিবর্তনের পথ ধরে মঙ্গলে সেই প্রাণ হয়তো বিকশিতও হয়েছিল। এমন সম্ভাবনাই জোরালো হল নাসার সাম্প্রতিক আবিষ্কারে। আনন্দবাজার
নাসা জানাচ্ছে, এক সময় হয়তো প্রচুর পরিমাণে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ছিল ‘লাল গ্রহে’। আর সেই বিশাল বিশাল আগ্নেয়গিরিগুলো নিয়মিতভাবে লাভা উদগীরণে যেত। যা প্রাণের অস্তিত্ব আর তার বিবর্তনেরই অন্যতম প্রমাণ। মূল গবেষক জ্যোতির্বিজ্ঞানী রিচার্ড মরিসের গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ। এই সেই ‘ট্রাইডাইমাইট’। মঙ্গলে যার হদিশ পেয়ে অবাক বিজ্ঞানীরা। কেন এই আবিষ্কারে এতটা উৎসাহিত নাসা? কারণ, একই ভাবে প্রাণ সৃষ্টি আর তার বিবর্তনের সময়ে পৃথিবীও ভয়ঙ্কর উত্তাল হয়ে উঠেছিল একের পর এক অগ্নু্যুৎপাতে। অনাদি অতীতে। আর এটাও দেখা গিয়েছে, ওই একের পর এক অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা না ঘটলে পৃথিবীতে প্রাণের বিবর্তনই ঘটত না। ফলে এই আবিষ্কার ‘লাল গ্রহে’ এক সময় প্রাণের সম্ভাবনাকেই জোরদার করল। মঙ্গলে ‘গেল ক্রেটার’ এলাকা ঢুঁড়ে বেড়াচ্ছে ‘কিউরিওসিটি’। মঙ্গলে যে প্রচুর পরিমাণে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ছিল এক সময়, সে ব্যাপারে কীভাবে নিশ্চিত হল নাসা?
মঙ্গলের ‘থারসিস রিজিওন’। আগ্নেয়গিরির (লাল, গোলাপি) এলাকা।
ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির (জেপিএল) মিডিয়া সেলের মুখপাত্র সুনন্দ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ‘‘২০১২ সালের আগস্টে নামার পর থেকেই মঙ্গলের ‘গেল ক্রেটার’ এলাকা কার্যত চষে বেড়াচ্ছে রোভার মহাকাশযান ‘কিউরিওসিটি’। তার তিন বছর পর সেটা ছিল ২০১৫ সালের জুলাইয়ের একটা দিন। যা ‘গেল ক্রেটার’-এ নামার পর সেটা ছিল ‘কিউরিওসিটি’র ‘সল-১০৬০’তম দিন। ওইদিন মঙ্গলের বুকে ‘বাকস্কিন’ নামে একটা জায়গার মাটি খুঁড়তে গিয়ে ‘কিউরিওসিটি’ এমন একটা খনিজ পদার্থের গুঁড়ো (পাউডার) তুলে আনে, যার এক্স-রে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ‘ট্রাইডাইমাইট’। যা সিলিকনেরই একটি যৌগ (যাকে সিলিকা বা সিলিকেট বলা হয়। এগুলো এক ধরনের লবণ)। আমরা কখনও ভাবিনি, ট্রাইডাইমাইট পাওয়া যাবে মঙ্গলে। কারণ, একমাত্র জীবন্ত আগ্নেয়গিরির উদগীরণে দেওয়া লাভাস্রোত থেকেই সিলিকনের এই যৌগগুলো বেরিয়ে আসে। সুদূর অতীতে প্রাণের সৃষ্টি আর তার বিবর্তনের সময় একই ভাবে একের পর এক অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল পৃথিবীতে। যা পৃথিবীতে প্রাণের বিবর্তন বা বিকাশে সহায়ক হয়েছিল।
আর তার প্রমাণ হিসেবে প্রচুর পরিমাণে ট্রাইডাইমাইটের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহে। কিন্তু ‘লাল গ্রহে’ও ওই ট্রাইডাইমাইট পাওয়া যাবে, আমরা ভাবতে পারিনি। মঙ্গলে যেকোনো কালে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ছিল, এর আগে তার কোনো সরাসরি প্রমাণ পাননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এবার ট্রাইডাইমাইটের হদিশ মেলার পর আর কোনো সংশয় রইল না যে, এক সময় প্রচুর পরিমাণে বিশাল আগ্নেয়গিরি ছিল ‘লাল গ্রহে’। আর সেগুলো নিয়মিতভাবে লাভা উদগীরণে যেত। পৃথিবীতে এই ট্রাইডাইমাইট তৈরি হয় প্রচ- তাপমাত্রায়, বিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে। যার নাম- ‘সিলিসিক ভলক্যানিজ্ম’। এখনও ওয়াশিংটনের সেন্ট হেলেন্স পর্বতচূড়া আর জাপানের সাতসুমা-আয়োজিমা আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসা লাভাস্রোতে পাওয়া যায় এই ট্রাইডাইমাইট। মঙ্গলের ‘গেল ক্রেটার’ এলাকার ‘বাকস্কিন’ অঞ্চলে যে একটা বড় লেক (হ্রদ) রয়েছে (যার নাম- ‘লেক গেল’), সেখানকারই পাথুরে মাটির মধ্যে মিলেছে ট্রাইডাইমাইটের হদিশ।’ সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ
