যোগ
কৃষ্ণ কান্ত বৈরাগী
যোগ হলো জীবনে চলার এক পদ্ধতি। সংস্কৃত শব্দ ‘যুজ’ থেকে আহরিত যোগ এর অর্থ হলো ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে বিশ্বসত্তার মিলন, যার অর্থ ‘নিয়ন্ত্রণ করা’, ‘যুক্ত করা’ বা ‘ঐক্যবদ্ধ করা’। যোগ মানে শুধুই শারীরিক কসরৎ নয়, আসলে মানুষের মন ও আত্মার ভিতরে যে অনন্ত শক্তি ও সম্ভাবনা আছে, সেই সম্ভাবনাকে বিকশিত করে তোলার পদ্ধতিই যোগ।
এই যোগবিজ্ঞানের
মধ্যেই জীবনকে পূর্ণরূপে অতিবাহিত করার, উপভোগ করার সারকথা নিহিত আছে। এই যোগ বিজ্ঞানের মধ্যে আছে জ্ঞানযোগ বা জ্ঞানের পথ, ভক্তিযোগ বা পরম শান্তিময় ভক্তির পথ, কর্মযোগ বা পরম আনন্দময় কর্মের পথ এবং রাজযোগ বা মন নিয়ন্ত্রণকারী এক সাধনার পথ। বর্তমানে সর্বাধিক প্রচলিত অষ্টাঙ্গ যোগের আটটি অঙ্গ হলো যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি। এই অষ্টাঙ্গ যোগের মাধ্যমে সাধক আধ্যাত্মিক পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে যান? ধ্যান যখন গাঢ় হয় তখন ধ্যানের বিষয়ে চিত্ত এমনভাবে নিবষ্ট হয়ে পড়ে যে, চিত্ত ধ্যানের বিষয়ে লীন হয়ে যায়। এ অবস্থায় ধ্যানরূপ প্রক্রিয়া ও ধ্যানের বিষয় উভয়ের প্রভেদ লুপ্ত হয়ে যায়। চিত্তের এই প্রকার অবস্থাকেই সমাধি বলে। এই সমাধি দুই প্রকার সবিকল্প এবং নির্বিকল্প। সাধকের ধ্যানের বস্তু ও নিজের মধ্যে পার্থক্যের অনুভূতি থাকলে, তাকে বলা হয় সবিকল্প সমাধি। আবার সাধক যখন ধ্যেয় বস্তুর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান সে অবস্থাকে বলা হয় নির্বিকল্প সমাধি। তখন তার মনে চিন্তার কোনো লেশমাত্র থাকে না। এই সমাধি লাভ যোগসাধনার সর্বোচ্চ স্তর, যোগীর পরম প্রাপ্তি। যোগ সাধনার সর্বোচ্চ অবস্থায় আত্মজ্ঞান লাভ হয়, অমিত্ব রহিত হয়, আর আত্মজ্ঞান লাভ হলেই ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা যায় এবং মোক্ষ লাভ হয়।
লেখক : ব্যাংক কর্মকর্তা