প্রশ্নোত্তর পর্ব সংস্কার কি?
সংস্কার এমন কিছু কাজ যা ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলে এবং একজন ব্যক্তির উপর প্রভাব বিস্তার করে। সংস্কার মানুষকে পবিত্র, দোষত্রুটি মুক্ত এবং নির্মল করে। যে আচার-অনুষ্ঠান জীবনকে ধর্মীয় পরিবেশে সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে তাই সংস্কার। প্রতিটা মানুষ চায় তার সন্তান একজন ভাল চরিত্রের মানুষ হিসাবে গড়ে উঠুক। চারপাশের পরিবেশ শিশুর চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখে। যেকোনো ভালো প্রভাব সুন্দর চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। সনাতন ধর্মে ১৬টি সংস্কার আছে।এই ষোলটি সংস্কার জীবনকে উন্নত করে, খারাপ সঙ্গ থেকে রক্ষা করে এবং তাকে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।
১৬ টি সংস্কার হচ্ছে :
১. গর্ভদান : বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী সন্তান জন্মদানের জন্য সকলের আশীর্বাদ পান। এই সংস্কার দ্বারা তারা স্বাস্থ্যবান, মহৎ এবং উদার হৃদয়ের সন্তান প্রার্থনা করেন।
২. পুংসবন : গর্ভদানের ৩ মাস পর এই সংস্কার পালন করতে হয়। গর্ভাবস্থায় সন্তানের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হয়।
৩. সীমন্তোন্নয়ন : এটা গর্ভধারণের ষষ্ঠ বা অষ্টম মাসের শেষে করা হয় সন্তানের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য।
৪. জাতকর্ম : জন্মগ্রহণের দিন সন্তানকে জাতকর্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে স্বাগতম জানান হয়।
৫. নামকরণ : জন্মের এগার মাসে এই সংস্কার পালন করা হয় এবং সন্তানকে একটি নাম দেওয়া হয়।
৬. নিষ্ক্রমণ : জন্মের চতুর্থ মাসে এই সংস্কার পালন করা হয়। শিশু সন্তানকে বাইরের পরিবেশে উন্মুক্ত করা হয়। যাতে সূর্যের আলো তাকে স্বাস্থ্যবান করে তোলে। দীর্ঘায়ুর জন্য প্রার্থনা করা হয়। এই সময় থেকে সন্তান প্রকৃতির কোলে প্রাকৃতিকভাবে বড় হতে থাকে।
৭. অন্নপ্রাসন : সন্তানের যখন দাঁত উঠতে থাকে সাধারণত ছয় থেকে আট মাস বয়সে এই সংস্কার পালন করা হয়। তখন থেকেই তাকে শক্ত খাবার দেওয়া হয়।
৮. চূড়াকরণ : প্রথম থেকে তৃতীয় বছর বয়সের মধ্যে এই সংস্কার পালন করা হয়। প্রথম বারের মতো মাথার সব চুল ফেলে দেওয়া হয়। সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
৯. কর্ণভেদ : তিন বছর বয়সে কান ফোরানো হয় এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করা হয়।
১০. উপনয়ন : ৫ থেকে ৮ বছর বয়সে উপনয়নের মাধ্যমে একটি শিশু গুরু/শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসে। গুরুর নিকট জ্ঞান, কর্ম, ভক্তিসহ বিভিন্ন নিয়মানুবর্তিতা অর্থাৎ শাস্ত্রে জীবন যাপনের যে পদ্ধতি উল্লেখ আছে তার অনুশীলন করে। ব্রহ্মচর্য জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সব রকম খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার অভ্যাস ছাত্র জীবনেই করতে হয়। নিয়মিত পড়ালেখা এই সংস্কারের পরেই শুরু হয়।
১১. বেদারম্ভ : উপনয়ন এর পরেই এই সংস্কার পালন করা হয়। এই সময় বেদ এবং বিভিন্ন শাস্ত্র অনুসারে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন শুরু হয়। জ্ঞানের সকল শাখায় তাকে বিচরণ করতে হয় এবং এর মাধ্যমে সে জাগতিক বিষয়ের সঙ্গে আধাত্মিক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে।
১২. সমাবর্তন : ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে যখন শিক্ষা গ্রহণ শেষ হয়, তখন এটি পালন করা হয়। গুরু ছাত্রকে যোগ্যতা অনুযায়ী ডিগ্রি প্রদান করেন। এরপর একজন ছাত্র আত্মনির্ভর এবং স্বাধীন জীবন যাপন করে।
১৩. বিবাহ : ব্রহ্মচর্য শেষে একজন বিয়ে করে পরবর্তী গৃহস্থ জীবনে পদার্পণ করে। একজন পুরুষ আর একজন মহিলা যারা এতদিন স্বাধীন জীবন যাপন করেছে এখন একসঙ্গে জীবনভর চলার সপথ গ্রহণ করে। বিয়ের পর সন্তান হয় এবং পরিবারের ধারা চলতে থাকে।
১৪. বানপ্রস্থ : ৫০ বছর বয়সে গৃহস্থ আশ্রম শেষে বানপ্রস্থ আশ্রম শুরু হয়। নিজের সুবিধার জন্য তিনি যে সব কাজ করতেন তার সবকিছু পরিত্যাগ করেন। পরিবারের সব দায়িত্ব সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে পূজর্চনা, ধ্যান এবং মানবসেবায় নিয়োজিত হন।
১৫. সন্ন্যাস : যদিও ৭৫ বছর বয়সে সন্ন্যাস গ্রহণ করার কথা বলা আছে তারপরেও আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আধ্যাত্মিকতা দ্বারা যিনি জাগতিক সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন তিনিই সন্ন্যাস গ্রহণ করবেন। এ সময় তিনি ধনসম্পদ, সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন এবং সকল ইচ্ছা আকাক্সক্ষা পরিত্যাগ করবেন । গাঢ় হলুদ রঙের ঢিলেঢালা পোশাক এই কঠোর জীবনের প্রতীক। তার কোনো নির্দিষ্ট পরিবার সমাজ অথবা গৃহ নেই।
১৬. অন্ত্যেষ্টী : মৃত্যুর পর শবদাহ করা হয়। কিন্তু আত্মা অমর। যখন দেহ অগ্নিতে দাহ করা হয় তখন শরীর যে পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি, যেমনÑ মাটি, জল, আগুন, বাতাস এবং আকাশ প্রকৃতিতে মিশে যায়। মৃতের আত্মার শান্তিতে প্রার্থনা করা হয়। শবদাহ হচ্ছে মৃতদেহ সৎকারের সবচেয়ে ভালো উপায়।