ইইউ ছাড়ছে ব্রিটেন ক্যামেরনের পদত্যাগ
ইমরুল শাহেদ : ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকা না থাকার প্রশ্নে ‘লিভ অর রিমেইন’র ঐতিহাসিক গণভোটে ‘লিভ ক্যাম্প’-এর জয় হয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ ব্রিটিশ ইইউ ত্যাগের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আর ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ ভোটার ইইউতে থাকার পক্ষে ভোট দেয়। ব্রিটেনের জনগণ ইইউ থেকে সরে আসার পক্ষে ভোট দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ডেভিড ক্যামেরন। ডাউনিং স্ট্রিটে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সময় তার পাশে স্ত্রী সামান্তা ক্যামেরন উপস্থিত ছিলেন। পদত্যাগের ঘোষণায় ক্যামেরন বলেন, জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানাতেই হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, এখন পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও তা অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। নতুন নেতা নির্বাচন করা হবে কনজারভেটিভ পার্টির কনফারেন্সে। গণভোটে ‘লিভ’ ভোট দিয়ে অভিবাসন নীতি, শরণার্থী সংকট, অর্থনৈতিক নীতি, ব্রিটিশ ঐতিহ্য রক্ষার দাবির প্রতিই সংহতি জানালো ব্রিটেনের জনগণ। ‘ইইউ থেকে বেরিয়ে এলে ৫০ কোটি মানুষের বাজার হারাবে ব্রিটেন’ রিমেইন পক্ষের এমন প্রচারণা সত্ত্বেও হারই মেনে নিতে হলো তাদের। সিএনএন, বিবিসি ও দ্য টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, ২৮টি দেশভুক্ত জোট ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের দীর্ঘ ৪০ বছরের বেশি সময়ের সম্পৃক্ততার অবসান হলো বলা যায়।
গত ২৩ জুন ইইউতে থাকার পক্ষে এ গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ৪৬ মিলিয়নের বেশি ভোটার ভোট দেন। দেশটির ইতিহাসে এটি তৃতীয় জাতীয় গণভোট ছিল। ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, লন্ডন ও স্কটল্যান্ডবাসী ইইউতে থাকার পক্ষে ভোট দেন। তবে ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে উত্তর ইংল্যান্ডে। সেখানকার ওয়েলস এবং ইংলিশ শায়ার্স ভোটাররা ব্যাপক সংখ্যায় দেশটির ইইউ ত্যাগের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ৫০ শতাংশের চেয়ে একটি ভোটও বেশি পেলে যেখানে জয় নিশ্চিত হতো সেখানে লিভ পেয়েছে ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ। আর রিমেইন পেয়েছে ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ। লিভের পক্ষে মোট ভোটের সংখ্যা ১ কোটি ৭৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪২টি এবং রিমেইনের পক্ষে ১ কোটি ৬১ লাখ ৪১ হাজার ২৪১টি।
৪ কোটি ৬৫ লাখ ১ হাজার ২৪১ জন ভোটার দেশজুড়ে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট দেয়। ভোট প্রদানের হার ৭২ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে অফিসিয়াল চিহ্ন না থাকা, একের অধিক পক্ষাবলম্বন, ব্যালট পেপারে ছাপা নম্বর বা স্বতন্ত্র চিহ্নিতকরণ মার্ক ছাড়া ভোটারকে চিহ্নিত করা যায় এমন লেখা বা ছাপ ব্যবহারের কারণে ২৬ হাজার ৩৩টি ব্যালেট পেপার বাতিল করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলসের ৩৮০টি এবং নর্দান আয়ারল্যান্ড ও জিব্রাল্টারের জন্য একটি করে মোট ৩৮২টি ভোট গণনা কেন্দ্রে গণনা শেষে ফলাফল নিজ নিজ গণনা কর্মকর্তার কাছে প্রদান করে। নর্দান আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডে রিমেইনের পক্ষে বেশি ভোট পড়লেও ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে লিভের পক্ষে বেশি ভোট পড়ে। পার্থক্য গড়ে দিয়েছে মূলত অধিকসংখ্যক ভোটার থাকা ইংল্যান্ড।
এই গণভোটের নিয়ম অনুযায়ী কোনো পরিস্থিতিতেই জাতীয়ভাবে ভোট পুনর্গণনার কোনো সুযোগ নেই। তবে যেকোনো গণনা কেন্দ্রে ভোট পুনর্গণনার আবেদন হলে, বিষয়টিতে স্থানীয় কাউন্টিং অফিসার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। ফল ঘোষণার পরে কেউ একে চ্যালেঞ্জও করতে পারে। তবে শুধু বিচারিক পর্যালোচনার জন্যই তার আবেদন করতে হবে এবং তা ফল ঘোষণার ৬ সপ্তাহের মধ্যেই করতে হবে। গণভোটের এই ফল ইইউ ত্যাগে কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা তৈরি করবে না। ব্রিটেনের সংসদে এর জন্য আইন পাস করতে হবে, যার সূচনা করতে হবে ইউরোপিয়ান কমিউনিটি আইন ১৯৭২ প্রত্যাহারের মাধ্যমে। লিভ গ্রুপের প্রচারকরা অভিবাসীদের ব্রিটেনে আসা বন্ধ করতে চায়। অন্যদিকে রিমেইন গ্রুপ বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এলে ৫০ কোটি মানুষের বাজার হারাবে ব্রিটেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইইউতে থাকার পক্ষে ভোটের আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিরোধী লেবার পার্টিও ইইউতে থাকার পক্ষে প্রচার চালায়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিকও ইইউতে ব্রিটেনের থাকার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। এই সকলের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করে ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি যে সম্পর্কের সূত্রপাত হয়েছিল তার সমাপ্তির পক্ষেই রায় এলো।
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী