‘ঐক্যবদ্ধভাবেই সুন্দরবন বাঁচাতে হবে’
রফিক আহমেদ : তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও সভার প্রধান বক্তা অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, দুই বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবেই সুন্দরবন বাঁচাতে হবে। গতকাল শুক্রবার তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বার্তা প্রেরক খোরশেদ আলম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান।
খোরশেদ আলম জানান, গত ২২ ও ২৩ জুন কলকাতায় পৃথক দুটো সমাবেশে সুন্দরবনবিনাশী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করে সুন্দরবন রক্ষায় বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা গ্রহণের পক্ষে ঐকমত্য প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ২২ জুন ‘সাইন্স ফর অল’সহ তরুণদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে মহাবোধী সোসাইটির হলরুমে ‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র: পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বাংলাদেশের ব্রাত্য আমিন পরিচালিত ‘লং লিভ সুন্দরবন’ তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। তরুণ শিক্ষার্থী, নাট্যকর্মী, বিজ্ঞান আন্দোলন কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী ছাড়াও শিক্ষক, বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদরা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তব্য দেনÑ স্বপন আচার্য, শুভাশীষ মুখোপাধ্যায়, অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শ^াশ^তী দে, বিজ্ঞান মোর্চার সমন্বয়ক সৌম্য দত্ত, বিজ্ঞান লেখক প্রদীপ দত্ত, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা সৌরেন বোস ও দিলীপ হালদার প্রমুখ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, তাজমহল সপ্তাশ^র্যের একটি। তার একটু দূষণ হলে আমরা সবাই পীড়িত বোধ করি। কোনো নির্বোধও বলবে না, তাজমহল ধ্বংস করে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হোক। সেই তাজমহলও মানুষের পক্ষে আরেকটি বানানো সম্ভব। কিন্তু সুন্দরবন আরেকটি কেউ বানাতে পারবে না। এটি দুই বাংলার অসাধারণ সম্পদ, দুই বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবেই তা বাঁচাতে হবে।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, যা মানুষের জীবন বিপন্ন করে তাকে কোনোভাবেই বলা যায় না। দুই দেশের সরকার এই সর্বনাশা প্রকল্প করতে গিয়ে কোন নিয়ম, স্বচ্ছতা এবং যৌক্তিকতা মানছে না। তারা নৈতিকভাবে পরাজিত। এই প্রকল্প একটি মানববিধ্বংসী প্রকল্প। এটি আর্থিকভাবে অযৌক্তিক, পরিবেশগতভাবে বিধ্বংসী, রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, দুইদেশের সম্পর্কের জন্য বিষবৎ ক্ষতিকর। দুই বাংলার জন্যই সুন্দরবন অস্তিত্বের প্রশ্ন। সেজন্য রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা এবং সুন্দরবনকে আরও জীবন্ত করা দুই দেশের মানুষেরই দায়িত্ব।
ভারতের সৌম্য দত্ত বলেন, ভারতের কোম্পানি এনটিপিসি এই সর্বনাশা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, ভারতীয় আরেক কোম্পানি এই কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে, ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক এই বিষাক্ত প্রকল্পে অর্থযোগান দিচ্ছে, ভারতীয় কোম্পানি কয়লা যোগান দিতে যাচ্ছে। অতএব ভারতের নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব বিশ^সম্পদ সুন্দরবনের ধ্বংস ঠেকাতে সোচ্চার হওয়া, সক্রিয় হওয়া। এই প্রকল্প বাতিল না হলে আরও বিপজ্জনক প্রকল্প দুই দেশকে মহাবিপদের দিকে নিয়ে যাবে। দুই সভাতেই দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রশ্নোত্তর হয় এবং আগামী দিনগুলোতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবার জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি