তথ্যের ফাঁস এড়াতে একসুর মোদি-সোনিয়ার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নরেন্দ্র মোদি ও সোনিয়া গান্ধীর মধ্যে রাজনৈতিক বিবাদ যতই থাকুক, আপাতত বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে এক অপ্রত্যাশিত জোট গড়ে উঠেছে। নিজেদের দলের তথ্য বাইরে প্রকাশ না করতে এক সুরে গাইছে শাসক ও বিরোধী দুই শিবিরই। আনন্দ বাজার
তথ্যের অধিকারের আইন মেনে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের সব তথ্য দিতে বলছেন কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনার। কিন্তু এই প্রস্তাব দলগুলো প্রত্যাখ্যান করছে। এখন গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনার শ্রীধর আচারালুর নেতৃত্বের তিন সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনাল। এর বাকি দুই সদস্য হলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্যসচিব বিমল জুলকা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ বিভাগের সচিব সুধীর ভার্গব। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের কাছে এনসিপি ও অন্য কিছু আঞ্চলিক দলও জানিয়েছে, তারা কেউই মনে করছে না যে রাজনৈতিক দলগুলো আদৌ পাবলিক অফিসের আওতায় আসে। অর্থাৎ, সরকারি অফিসের মতো রাজনৈতিক দলগুলো তাদের তথ্য মানুষের সামনে তুলে ধরতে বাধ্য নয়। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের বহু দিনের যুক্তি, আরটিআই আইন অনুসারেই রাজনৈতিক দলগুলো পাবলিক অফিসের আওতায় আসে। কাজেই ভারতের যে কোনো নাগরিক রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জবাব দিতে বাধ্য।
তথ্যের অধিকার আইনটি পাস হয় মনমোহন সিংহের জমানায়। ২০০৫ সালের সেই সিদ্ধান্ত ভারতীয় গণতন্ত্রের বিকাশে এক অন্যতম পদক্ষেপ। কিন্তু সেই সময়েও ইউপিএ সরকার যখন বিলটি সংসদে পেশ করে, তখন রাহুল গান্ধী প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, এই আইনে থাকা যে অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে রাজনৈতিক দল পাবলিক অফিস, সেই অংশটি তিনি মানেন না। এ জন্য সংসদে তিনি বিলটি ছিঁড়েও দেন।
এরপরে বেশ কয়েক বছর কেটে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নতুন করে কেন্দ্রীয় তথ্য
কমিশন গঠিত হয়েছে। এই কমিশনের কাছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন এসে জমা হয়েছে। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দল ও নেতাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে অনেক প্রশ্ন যেমন এসেছে, তেমনি দলগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিয়েও জানতে চেয়েছেন অনেকে। সারদা-নারদা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে এমপি কেনাবেচার জন্য সংসদে টাকার থলি নিয়ে আসার বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে অনেক।
তথ্য কমিশন বিজেপির নেতা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছে এ ব্যাপারে নোটিস পাঠিয়েছে। কারণ, আরটিআই আইনটি যখন হয়, তখন রাজনাথ দলের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু শাসক দল তথ্য কমিশনের নোটিস নিয়ে চূড়ান্ত অসহযোগিতা দেখিয়েছে। রাজনাথ নিজে তো নয়ই, কোনো প্রতিনিধিকেও শুনানিতে পাঠাননি। দিল্লিতে ট্রাইব্যুনালে ডাকা হয়েছে সনিয়া গান্ধী, শরদ পাওয়ারসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদেরও। গত সোমবার সনিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে এআইসিসির লিগ্যাল সেলের প্রধান ট্রাইব্যুনালে জানান যে তারা রাজনৈতিক দলকে পাবলিক অফিস হিসেবে মানছেন না। অর্থাৎ, দল নিয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি নন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, শ্রীধর আচারুলু শুনানিতে সনিয়ার দলের নেতাদের জানিয়েছেন, বেশ কিছু কারণের জন্যই রাজনৈতিক দলগুলো তথ্যের অধিকার থেকে দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে পারে না। এ নিয়ে যুক্তি ছিল, প্রথমত রাজনৈতিক দল দেশের সংবিধান মেনে চলে, নির্বাচন কমিশন তাদের সাংবিধানিক বৈধতা দেয়। দ্বিতীয়ত, সংসদে আইন ব্যবস্থায় তারা সামিল হয় সংবিধান মেনে। তৃতীয়ত, নিজের এলাকার উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য সাংসদরা কোটি কোটি টাকা খরচ করার সুযোগ পান। আর দলীয় প্রতিনিধিরা সেটি দলের নির্বাচনি স্বার্থে কাজে লাগান। প্রশাসনিক কাজেও দলের অংশগ্রহণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে উঠেছে।
তবে এই সব যুক্তিতেও চিড়ে ভিজছে না। রাজনৈতিক দলের নেতারা পাল্টা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের সামনে দল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়মিতভাবে দিয়ে থাকেন তারা, আয়-ব্যয়ের হিসাব দেন আয়কর বিভাগকেও। কোন খাত থেকে কীভাবে রোজগার হচ্ছে বা খরচই বা কতটা হচ্ছে, তা জানানো হয় আয়কর রিটার্নে। কুড়ি হাজার টাকার থেকে বেশি আয়ের উৎস জানানো হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের সামনেও। আর ভোটের খরচের হিসাব-নিকাশ তো নিয়মিতভাবে দেওয়াই হচ্ছে। অর্থাৎ, জনগণের থেকে টাকা সংগ্রহ করে মানুষকে একেবারে অন্ধকারে রাখা হচ্ছে, বিষয়টি আদৌ এমন নয়। কিন্তু তথ্য কমিশনের সামনে রাজনৈতিক দলকে যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিতে হলে, তা অপব্যবহারের প্রবল সম্ভাবনা থাকবে। অর্থাৎ, এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লড়াইয়ের ক্ষেত্রও হয়ে উঠতে পারে। তথ্য কমিশনারের সামনে এখন বড় সমস্যা, কংগ্রেস ও বিজেপি এমনকি তৃতীয় শক্তির দলগুলোও তাদের তথ্য তুলে ধরতে একইভাবে শঙ্কিত। শ্রীধর আচারুলু রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ