সব মেয়র কি তবে মেয়র নন?
শেখ মিরাজুল ইসলাম
শুধুমাত্র সমগ্র ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী শহর নারায়ণগঞ্জের তিন মেয়রকে বিশেষ বিবেচনায় যথাক্রমে পূর্ণমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার খবরটা জেনে অনেক ভালো লেগেছে। যথাক্রমেÑ ঢাকার আনিসুল হক, সাঈদ খোকন ও সেলিনা হায়াত আইভীকে বিশেষ বিবেচনায় এই মর্যাদা দেওয়া হয়। এটাই ট্রান্সপেরেন্সি, এর দ্বারা স্পষ্ট হলো ঢাকা আর নারায়ণগঞ্জের গুরুত্ব বাংলাদেশের অন্যান্য প্রধান শহরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। হয়তো বিষয়টা এতো সহজে সরলীকরণ করা যাবে না। কারণ জনসংখ্যা আর আয়তনের নিরিখে এবং সেই সঙ্গে ব্যাপক কর্মযজ্ঞের কারণে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট বা খুলনার সঙ্গে ঢাকার কোনো তুলনা চলে না। ওইসব শহরগুলোর এমন কোনো জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্ব নেই বা থাকলেও সেখানে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের মতো প্রচুর পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আনাগোনাও নেই। যার ফলে প্রটোকলের দোহাই দিয়ে ওই শহরের মেয়রদেরও বাড়তি পদমর্যাদা দেওয়া ‘সময়োচিত’ নয়। এর আগেও এরশাদের আমলে ঢাকার মেয়র নাজিউর রহমান মঞ্জুকে প্রতিমন্ত্রী, বিএনপি ও আওয়ামী আমলে সাদেক হোসেন খোকা ও মোহাম্মদ হানিফকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। তখনও অন্যান্য শহরের মেয়রদের অবস্থান কেবল মেয়র পদে সীমিত ছিল। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, ‘নতুন এই পদমর্যাদা ব্যক্তি আনিসুল হক ও ব্যক্তি সাঈদ খোকনের ক্ষেত্রে ততদিন বলবৎ থাকবে যতদিন তারা এই পদে থাকেন। এটা তাদের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সম্মান। সিটি মেয়র হলেই পরবর্তীতে যে অন্য মেয়ররাও মন্ত্রীর মর্যাদা পাবেন তা কিন্তু নয়।’
দেশে বর্তমান ১১টি সিটি কর্পোরেশনে খুলনা, রাজশাহী, গাজীপুর ও সিলেটের মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন স্থানীয় সরকার। তারা শুধু বিরোধী দলেরই প্রার্থী ছিলেন না, তাদের বিপক্ষে ফৌজদারী মামলায় নানা অনিয়মের অভিযোগও আছে। সত্য-মিথ্যে আদালতের বিচারাধীন। সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অনেক আগেই রাজনীতিকরণের ঘেরটোপে বন্দী হয়ে গেছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর হতে শুরু করে কমিশনার কেউ এখন আর রাজনীতির বলয়ের বাইরে নন। এর রেশ ধরে নাগরিক সুবিধা কতটুকু বেড়েছে তা বলাই বাহুল্য। শরীরের সব রক্ত মুখে জমা হলেই তাকে স্বাস্থ্যবান বলে না। কিন্তু বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হিসেবে পরিচিত এবং একইসঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের মেয়র আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত সৈনিক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে কেন কোনো বাড়তি মর্যাদা দেওয়া হলো না তা স্পষ্ট নয়। এমনিতেই চট্টগ্রাম শহরের নেতাকর্মীরা জাতীয় ক্ষেত্রে নিজেদের ‘অবহেলিত’ ভেবে অতীতে অনেকবার হীনমন্যতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। চট্টগ্রামের রাজনীতিও ঢাকার কেন্দ্রের কাছে রহস্যময় মনে হয়। তাই পুরনো দ্বন্দ্বের জের আবার বেড়ে যেতে পারে এই সন্দেহটা ঘুরে ফিরে চলে আসে। তবে কি সব মেয়ররা কি এক নন? কেউ পাবে কেউ পাবে না। এই তত্ত্ব যদি হালে পানি পায় তবে প্রশাসনে জড়তা আসতে বাধ্য। আর এর জের ধরে বাদবাকি শহরগুলোর মেয়রগণ যদি হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালার মতো কাউকে ডেকে নিয়ে আসেন তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন