বয়সের সুখ, বয়সের দুখ!
ডা. আব্দুন নূর তুষার
গড় আয়ু বৃদ্ধিÑ একটি দেশের সূচক। সূচক বৃদ্ধি অনেকভাবে হয়ে থাকে। গড় আয়ু তার মধ্যে একটি। গড় আয়ু বৃদ্ধি মানেইÑ একাত্তর বছর করে সকলে বাঁচবে, তা নয়। আগে মানুষ খুব অল্প বয়সে মারা যেত। তারও অনেক কারণ ছিল। বড় কারণের মধ্যেÑ নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া, সন্তান জন্মদানে মায়ের অকাল মৃত্যু, ধনুষ্টংকার এবং ৬টি ছোঁয়াচে রোগ মানুষের অকাল মৃত্যুতে বড় ভূমিকা রাখত। কিন্তু এখন পরিবর্তিত সময়। পরিবর্তনের সময়। সচেতনতার সময়। যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন মানুষ অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। নিজেকে এখন মানুষ অনেক যতœ করে। স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখে।
মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি নিশ্চয়ই অনেক আনন্দের। যেকোনো সমাজের জন্যও এটি একটি সুখের সংবাদ। তবে এখানে কিছু বিষয় রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এই গড় আয়ু বৃদ্ধি চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতিরই একটি ফল। মনে রাখতে হবে, চিকিৎসা বিজ্ঞান, চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের আয়ু বাড়াতে পারে না। গড় আয়ু বৃদ্ধির বড় কারণ, দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি। এখন আর শিশু জন্মের পরপরই মারা যায় না। ডায়েরিয়া, গুটি বসন্ত, জন্ডিস, পোলিও এবং পর্যাপ্ত ভিটামিনের অভাবে এখন আর মানুষ মরে না। এই উন্নতি জনস্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের ফল। স্বাস্থ্যসেবার প্রতি সরকারের সুনজরও রয়েছে। তাদের প্রচেষ্টাকে খাটো দেখার সুযোগ নেই।
আয়ু বৃদ্ধির ফলে আমরা আনন্দিত। তবে আনন্দের পাশাপাশি বিপজ্জনক দিকও রয়েছে। আগে পঞ্চাশ বছরের পর মানুষের ডায়েবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চরক্তচাপের মতো রোগগুলো একরকম হতো না। এই রোগগুলো আগে ছিল না বললেই চলে। এখন বয়স বেশি, রোগও বেশি। রোগ হলে চিকিৎসা সেবাও নিতে হবে। দেশে চিকিৎসা সেবার ওপরও চাপ বাড়বে। বেশি বয়সী মানুষের সঠিক চিকিৎসা সেবা দিতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বেড, আইসিইউ থাকতে হবে। কিন্তু এসব গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সুবিধা আমাদের এখানে অনেক কম। এই জায়গাটিতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। সামর্থ বাড়াতে হবে। গড় আয়ু বৃদ্ধির ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
পরিচিতি : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
মতামত গ্রহণ : শরিফুল ইসলাম
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন